নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘লন ভাই, খাড়াইছি, তুইল্লা লন’ ঠিক এই লাইনটা না বললেও এমনই কিছু একটা বলে ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন স্বৈরাচার বিরোধী গণ-আন্দোলনে নিহত শহীদ নূর হোসেন। এর ঠিক ১০ মিনিটের মধ্যেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
ওই দিন ছবি তোলার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে এই ঘটনাকে এভাবেই বর্ণনা করেন ফটো সাংবাদিক দিনু আলম। তাঁর ক্যামেরায় তোলা নূর হোসেনের গায়ে স্বৈরাচার নিপাত যাক লেখা ছবিটি এরশাদ সরকার পতনে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তিনি। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বিরোধী দলগুলোর ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে তোলা ছবিগুলো তাই স্বত্ব মুক্ত করে দিয়েছেন দিনু আলম। এখন যে কেউ সরাসরি ছবিগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন, তবে এ ক্ষেত্রে ছবি ক্রেডিট তাঁকে দিতে হবে।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ফটোগ্রাফিক ডকুমেন্ট শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
৩৫ বছর ধরে আগলে রাখা এই ছবিগুলো বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের ইতিহাসের অংশ। ছবিগুলো ঐতিহাসিক সেই দিনের ঘটনা প্রবাহের সাক্ষ্য বহন করছে বলে মনে করেন দিনু আলম। তিনি বলেন, ‘সেদিন ঢাকার রাজপথে আমি কিছু ছবি তুলেছিলাম, যাকে আমি সেই সময়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ফটোগ্রাফিক ডকুমেন্ট মনে করি। আগামী প্রজন্মের জন্য আপনারা চাইলে ছবিগুলো ব্যবহার করতে পারেন কোনো রয়্যালটি এবং অনুমতি ছাড়াই। শুধু অনুরোধ-ফটো ক্রেডিটটা যেন আমি পাই।’
৩৫টি ছবির মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিছিলে তাঁর গাড়ির ঠিক সামনেই বুকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লেখা নূর হোসেনের ছবি, এছাড়াও জিরো পয়েন্টের পাশে এবং জিপিও’র সামনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার মিনিট দশেক আগে নূর হোসেনের মুখচ্ছবিসহ তিনটি ক্লোজ ছবি, যার একটি দিয়ে ১৯৯১ সালের ১০ নভেম্বর ডাক বিভাগ দুই টাকা মূল্যের একটি স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করে। এছাড়া নূর হোসেনসহ আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে এগিয়ে যাওয়া মিছিলে ঢাকা স্টেডিয়ামের সামনে ট্রাকে অবস্থান নেওয়া পুলিশের গুলি ছোড়ার মুহূর্তের ছবিও রয়েছে।
এত বছর পর নিজের ছবি নিয়ে এমন পদক্ষেপ কেন নিচ্ছে জানতে চাইলে দিনু আলম বলেন, ‘বিবিসি নিউজ-এ আমার ছবিগুলো প্রকাশের জন্যে সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন লিখিত অনুমতি চাইলে আমি সানন্দে তা তাঁকে দিই। কিন্তু আমার তখন মনে হয়, ঐতিহাসিক এই ছবিগুলো কেউ প্রকাশ করতে চাইলে আমার অনুমতি লাগবে কেন? এই ছবিগুলোর সংবাদ মূল্য এখনো রয়েছে বলে আমি মনে করি।’
দিনু আলম বলেন, ‘আমার এই ছবিগুলোর কথা অনেকেই জানেন না। তাই আপনাদের তা জানাতে এবং ছবিগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে আগামীকাল শহীদ নুর হোসেন দিবসকে সামনে রেখে আজ আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।’
ছবিগুলো ছবির ভান্ডার ‘ফ্লিকার ডট কম’ এবং ‘উইকিমিডিয়া কমন্স’-এ Share alike আন্তর্জাতিক ফ্রি টু ইউজ লাইসেন্সের মাধ্যমে সবার ব্যবহার উপযোগী করে দেওয়া আছে।