ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদের ছেলের বিয়ের খাবার দেরিতে সরবরাহের অসন্তোষের জেরে ঢাকার আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শারমিন গ্রুপের শ্রমিকেরা। আজ সোমবার আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় রাজধানীর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ ৫ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এতে যানবাহনের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
পুলিশ, শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শারমিন গ্রুপের মালিক ইসমাইল হোসেন, আর হা-মীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ সম্পর্কে ভাই। হা-মীম গ্রুপের এ কে আজাদের ছেলের বিয়ে উপলক্ষে শারমিন গ্রুপের আশুলিয়া জোনের ১৬ হাজার শ্রমিককে দাওয়াত করা হয়। ৩ জানুয়ারি আশুলিয়ার নরসিংহপুরে শারমিন গ্রুপের কারখানার ভেতরে খাবারের আয়োজন করা হয়।
দুপুর ১২টার মধ্যে শ্রমিকদের খাবার পরিবেশনের কথা থাকলেও সরবরাহের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন দফায় খাবার সরবরাহ করে। বিলম্বে খাবার সরবরাহের কারণে শারমিন ফ্যাশনস ১ ও ২ এবং শারমিন অ্যাপারেলস ২-এর ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক খাবার না নিয়েই চলে যান। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
তাঁদের মধ্যে অর্ধশতাধিক শ্রমিক পরদিন (৪ জানুয়ারি) শারমিন গ্রুপের প্রতিটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার দাবি জানান। কিন্তু মালিকপক্ষ থেকে ছুটি ঘোষণায় অপারগতা প্রকাশ করা হয়।
জানা যায়, ছুটি না দেওয়ায় ওই দিন (৪ জানুয়ারি) শ্রমিকেরা কারখানায় উপস্থিত হয়ে হাজিরা নিশ্চিত করার পর শারমিন ফ্যাশনসের ইউনিট-২-এর কয়েকজন শ্রমিক পাশের শারমিন অ্যাপারেলসের ইউনিট-২-এর ভবনে গিয়ে তাঁদের কাজ বন্ধ করতে বলেন। ওই কারখানার শ্রমিকেরা (শারমিন অ্যাপারেলস) রাজি না হওয়ায় শারমিন ফ্যাশনসের শ্রমিকেরা কারখানাটিতে ভাঙচুরের পাশাপাশি কয়েকজন শ্রমিককে মারধর করেন। এরপর কারখানার সব শ্রমিকেরা বের হয়ে যান।
এর জেরে ৫ জানুয়ারি শারমিন অ্যাপারেলসের শ্রমিকেরা শারমিন ফ্যাশনসের শ্রমিক ও স্টাফদের মারধর করেন। এতে প্রায় সব শ্রমিকের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শারমিন গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনার পর ভিডিও দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪৫৩ জন শ্রমিককে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পর থেকে গত বৃহস্পতিবার অর্ধেক কর্মদিবস পর্যন্ত শ্রমিকেরা কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও কোনো কাজ করেননি। অন্যদিকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, শ্রমিক সংগঠনগুলোর পরামর্শ অনুযায়ী গত রোববার শ্রমিকনেতা, বিজিএমইএ ও কলকারখানা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ শ্রমিকদের নিয়ে মালিকপক্ষ বৈঠকে বসেন। কিন্তু শ্রমিকদের অযৌক্তিক দাবির কারণে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
পুলিশ জানায়, শ্রমিকের সঙ্গে মালিকপক্ষের বনিবনা না হওয়ায় কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া শ্রমিকেরা আজ সকালে কারখানার সামনে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা ৩টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখার পর দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হলে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন। টানা ৫ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের কারণে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধস্থলের উভয় পাশে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকেরা।
নাম প্রকাশ না করে এক শ্রমিক বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এখন আমাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করেই বিদায় করে দেওয়া হবে। তাই আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি।’
শারমিন গ্রুপের মালিক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘যৌক্তিক কারণে কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা হলে আইন অনুযায়ী তাঁদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু শ্রমিকেরা তা মানতে নারাজ। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের অযৌক্তিক দাবি জানাচ্ছেন, যা আইন অনুযায়ী তাঁরা পান না। তিনি আরও বলেন, ‘একটি চক্র আর্থিকভাবে ফায়দা লোটার জন্য যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে শ্রমিকদের ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা বাড়ছে। এভাবে পোশাকশিল্পে অস্থিরতা বাড়তে পারে।’
জানতে চাইলে আশুলিয়া জোনের শিল্প পুলিশের সুপার মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকেরা তাঁদের দাবি আদায়ের জন্য সড়ক-মহাসড়ককে বেছে নিয়েছেন। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। তাঁদের বুঝিয়েও কোনো লাভ হয় না।’
পুলিশ সুপার আরও বলেন, সব পক্ষ নিয়ে বিজিএমইএতে আজ বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালিকপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।