গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
বাবার কোলে নিশ্চিন্তে বসে ছিল শিশুটি। বাসের কাচের জানালা দিয়ে বাইরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে বাবাকে বারবার প্রশ্ন করছিল, ‘এটা কী, ওটা কী।’ তার কৌতূহলী চোখ নতুন কিছু দেখার জন্য সারাক্ষণ পড়ে ছিল বাইরে। কিন্তু কে জানত, সামনেই তার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সিলেট-জাফলং সড়কের হরিপুর গ্যাস ফিল্ডের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় শিশু পরশের (১২)। বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবার কোলে ছটফট করতে করতে মারা যায় সে।
পরশ ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পশ্চিম শালিহর গ্রামের রাসেল মিয়ার ছেলে। আজ শনিবার সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
দুর্ঘটনায় শিশুটির বাবা রাসেল গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া শালিহর গ্রামের আরও ২৩ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে সাইফুল ইসলামের ছেলে শাহিন (১৭) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
ঘটনার সময় বাসে ছিলেন শালিহর গ্রামের মো. রইছ উদ্দিন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে এ গ্রামের (শালিহর) ৫২ জন মিলে একটি বাস ভাড়া নিয়ে সিলেট হযরত শাহজালাল (রা.) ও হযরত শাহপরান (রা.) মাজার জিয়ারত করতে ও জাফলং ভ্রমণের উদ্দেশে যাত্রা করি। গতকাল শুক্রবার ভোর ৪টায় সেখানে পৌঁছে যাই আমরা। সঙ্গে মানতের তিনটি খাসি ছিল, সেগুলোর মধ্যে একটি জবাই করার নিয়ত থাকাই তা জবাই করি এবং অন্য দুটি ছেড়ে দিই। খাওয়াদাওয়া করে সকালে সেখান থেকে চলে যাই হযরত শাহপরান (রা.)-এর মাজারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১২টার পর জাফলংয়ের উদ্দেশে আমরা যাত্রা করি। পরশ ড্রাইভারের পেছনের সিটে জানালার পাশে তার বাবার কোলে বসে ছিল। হরিপুর গ্যাস ফিল্ড পার হতেই বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে আমাদের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। পরশ বাসের দেয়ালে ধাক্কা খায়, মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই সে বাবার কোলে ছটফট করতে করতে মারা যায়।’
এ ঘটনায় শোকাহত পরিবার ও আহতদের সান্ত্বনা দিতে ছুটে তাঁদের বাড়ি যান স্থানীয় সংসদ সদস্য নিলুফার আনজুম পপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খানসহ আরও অনেকে।