নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সকাল ৭টায় কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব বেগম রোকেয়া। গন্তব্য চট্টগ্রাম। স্টেশনে এসে জানতে পারেন জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন না করে ট্রেনের টিকিট নেওয়া যাবে না। নতুন এই নিয়ম আর প্রযুক্তিগত অদক্ষতার কারণে নিবন্ধন প্রক্রিয়া তাঁর কাছে কঠিন কাজে পরিণত হয়েছে।
ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরে এক সংবাদকর্মীর সাহায্যে নিবন্ধনের জন্য বার্তা পাঠিয়েছেন। তবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে ফিরতি বার্তা আসার আগেই তাঁর ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলে গেল। বাইরে দাঁড়িয়ে সেটা দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না এই বৃদ্ধার।
যখন এই বৃদ্ধার ট্রেনটি ছেড়ে চলে যায়, তখনো নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য যাত্রীদের সহায়তা করতে কমলাপুরের একমাত্র নিবন্ধন বুথে কাউকে দেখা যায়নি। এই বুথের সামনে দাঁড়িয়েই রোকেয়া আজকের পত্রিকাকে জানালেন ক্ষোভের কথা। তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পরে কতবার কতভাবে রেলওয়ে নানা নিয়ম বানিয়েছে। এতে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি ছাড়া অন্য কোনো সুবিধা হতে দেখিনি। যে পদ্ধতিতে ভোগান্তি বাড়ে, সেটা কেন করা হয় আমার বুঝে আসে না।’
তিনিও ক্ষোভ জানালেন আজকের পত্রিকার কাছে। গফরগাঁওয়ের আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, ‘এত ভেজাল করলে ট্রেনে যাতায়াত করব কিবায়! নতুন সিস্টেম করছে, কিন্তু আমরা কেউ তা জানি না। এইহানে কীভাবে কী করব এডাও বুঝতে পারছি না।’
স্টেশন চত্বরে কথা হয় আশিকুর রহমানের সঙ্গে। ঢাকায় ভর্তি কোচিং করতে এসেছেন তিনি। ট্রেনে করে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে কমলাপুরে এসেছিলেন, কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় তাঁকে ফিরে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আইডি কার্ড নাই, তাহলে কীভাবে যাব? বাবা-মায়ের আইডি কার্ডও সঙ্গে নেই। তাই নিবন্ধনও হলো না, টিকিটও পেলাম না। এখন ফিরে যাচ্ছি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের কর্মকর্তা ও নিবন্ধন বুথে দায়িত্বরত কবির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সকাল থেকেই যেসব যাত্রী অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও টিকিট কাটতে পারছেন না তাদের রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছি। অনেকেই আছেন সিস্টেমটা এখনো জানেন না। তাই ভিড়ও করছেন। তবে সবাই সিরিয়াল অনুযায়ী এলে কাজটা দ্রুত শেষ করা যায়।’
ফিরতি বার্তা আসতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই ভোটার আইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ ভুল দেওয়ার কারণে ফিরতি বার্তা আসতে দেরি হয় বা আসে না। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও অন্তত ১০ মিনিট সময় তো দিতেই হবে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেকেরই নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও সবকিছু ঠিক থাকলেও ফিরতি বার্তা আসছে না।
আজ থেকে টিকিট যার, ভ্রমণ তাঁর—এই নীতি নিয়ে শুরু হয়েছে ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে নিবন্ধন করে অনলাইন ও কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহের পদ্ধতি। সকাল ৯টায় এই পদ্ধতির উদ্বোধন করেছেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।
এই পদ্ধতির জন্য যাত্রীসাধারণ ও রেলওয়ে প্রস্তুত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেবল শুরু করেছি। ধীরে ধীরে সবকিছুই বাস্তবায়ন হবে। যাত্রীসাধারণও অভ্যস্ত হবে।’
কমলাপুর স্টেশনে একটি মাত্র নিবন্ধন বুথ। এতে কি যাত্রীদের পুরোপুরি সহায়তা সম্ভব? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখে এসেছি একটি মাত্র নিবন্ধন সহায়তা বুথ। এটা বাড়ানো হবে।’