নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
৫ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ১ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২১৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে হওয়া মামলায় ছাগল-কাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মতিউর রহমানকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে এই আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
বিচারক মো. জাকির হোসেন ২৭ জানুয়ারি আসামির উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। দুদকের বিশেষ পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, শুনানির জন্য ওই দিন মতিউরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত বছর ১৫ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ঢাকা-১-এ মতিউরের বিরুদ্ধে এই মামলা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক শাজাহান মিরাজ আবেদনে উল্লেখ করেন, মতিউরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে। তাঁর সম্পদের বিষয়ে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তিনি আবেদনে আরও বলেন, মামলায় উল্লেখিত সম্পদ ছাড়াও বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য জানা গেছে। তাঁকে রিমান্ডে দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এসব তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।
একই দিন মতিউরের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৯০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ৭৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়।
পরে ৬ জানুয়ারি মতিউরের আরও ১২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তাঁর প্রথম স্ত্রী (লায়লা কানিজ) ও ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে পৃথক আরও তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
১৫ জানুয়ারি মতিউর ও তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকিকে বাড্ডা এলাকা থেকে আটক করা হয়। আটকের সময় তাঁর বাসায় একটি শটগান পাওয়ায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়। ওইদিন ওই মামলায় মতিউরকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে লায়লা কানিজকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে রিমান্ড শেষে মতিউরকে ১৮ জানুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে ছাগল-কাণ্ডের মতিউর ও তাঁর পরিবারের সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন ঢাকার আদালত। বিপুল সম্পদ ক্রোক ও ১৯টি কোম্পানিতে ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৭টি শেয়ার অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেন আদালত।
গত কোরবানির ঈদে ১৫ লাখ টাকায় (প্রাথমিক দর) ‘উচ্চবংশীয়’ ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল (ছড়িয়ে পড়া) হন মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত। এর পর থেকে তাঁর বিলাসী জীবনযাপনের নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই ছাগল-কাণ্ডের জেরেই আলোচনায় আসেন ইফাতের বাবা এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান।
তখন মতিউর রহমানের ছেলের দামি ঘড়ি, গাড়ি, বিলাসী জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্য সামনে আসতে শুরু করে।
একপর্যায়ে মতিউরকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে যুক্ত করা হয়। সরিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে সরকার মনোনীত পরিচালক পদ থেকেও।