জার্মানির অনেক বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বে অনন্য অবস্থান তৈরি করেছে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম পছন্দের দেশ জার্মানি। দেশটির সেরা পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এবারের আয়োজন।টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ, মিউনিখ
টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ (টিইউএম) হলো জার্মান সরকারের একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৮৬ সালে শুরু হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে ৩০ এর মধ্যে থাকে। বর্তমানে এর র্যাঙ্কিং ২৮। টিইউএমে ১৫টি বিভাগে মোট ৪০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। তাঁদের মধ্যে ৩০ শতাংশই বিদেশি শিক্ষার্থী। ১৫টি বিভাগের প্রায় ২০০টি ডিগ্রি প্রোগ্রাম রয়েছে। এখানে অ্যারোস্পেস থেকে শুরু করে কৃষি, অর্থনীতি, স্থাপত্যবিদ্যা, জীব রসায়ন, ম্যানেজমেন্ট, বায়ো ইনফরমেটিকস, পানীয় বিদ্যাসহ নানান বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করা যায়।
১৯২৭ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন সাবেক শিক্ষার্থী পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও মেডিসিন বিষয়ে নোবেল পুরস্কার পেয়ে এসেছেন। টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ পুরো জার্মানির এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
১৪৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া লুডউইগ ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটি জার্মানির প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এখন পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মোট ৪২ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অট্টো হান, ম্যাক্স প্ল্যাংক এবং ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের মতো বিখ্যাত মানুষেরা। এখানে ৯০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১১ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। এখানে ১৫ শতাংশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নেওয়া হয়।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় ৫০০ বছর ধরে সংস্কৃতি, অর্থনীতি, আইন ও সমাজবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোর ওপর গবেষণা করে আসছেন। কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে এই ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৫৯তম।
১৩৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় জার্মানির অন্যতম পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়। কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে এর অবস্থান ৮৪তম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৬৪টি স্নাতক প্রোগ্রাম এবং ১৩২টি স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম। এখানে সমাজবিজ্ঞান, আইন, ব্যবসা কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিভিন্ন অনুষদ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি মেডিসিন বিষয়ে পড়ালেখার জন্য বেশি বিখ্যাত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই বিদেশি শিক্ষার্থী। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ১৬ জনের ভর্তির আবেদন এখানে গ্রহণ করা হয়।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে জার্মানির এই বিশ্ববিদ্যালয় বেশ জনপ্রিয়। কারণ, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষাভাষীদের জন্য একাধিক কোর্স রয়েছে। কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে ১২৬তম অবস্থানে রয়েছে হামবোল্ট ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনক বলে আখ্যায়িত করা হয়। এখানে প্রতি ১০০টি আবেদনের মধ্যে ১৮টি আবেদন গ্রহণ করা হয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় যুক্ত ছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্ট কচ, কার্ল মার্ক্সের মতো গুণী বিদ্বানেরা। এখানকার অনেক গবেষক নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এখানে প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাস থেকে শুরু করে ইংরেজি, ইসলামিক স্টাডিজ, দর্শন, সংগীত, অর্থনীতি, মেডিসিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা যায়।
কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে ৯৯তম অবস্থানে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। আরডব্লিউইউটিএইচ আখেন ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৭০ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়টি মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনার জন্য বিখ্যাত।
এখানে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সমাজবিজ্ঞান, ম্যানেজমেন্ট, আর্টস, স্থাপত্যবিদ্যাসহ ১৭০টির বেশি বিষয়ের ওপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। তবে এখানে ভর্তি হওয়া বেশ কঠিন। প্রতি ১০০ জন আবেদনকারীর মধ্যে এখানে মাত্র ১০ জনের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়।