সাক্ষাৎকার

থিয়েটার তারকা হওয়ার জায়গা না, ভালো মানুষ হওয়ার জায়গা

২০১২ সালে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের মাধ্যমে মঞ্চাঙ্গনে পথচলা শুরু এস আর সম্পদের। এরপর অনেকে মিলে গড়ে তুললেন অনুস্বর নাট্যদল। ‘তিনকড়ি’, ‘স্বপ্নভূক’, ‘হুতাশ মরণ’, ‘রায়মঙ্গল’, ‘হার্মাসিস ক্লিওপেট্রা’ ‘বিবিধ শোক অথবা সুখ’ ও ‘মহাশূন্যে সাইকেল’ নাটকে প্রশংসিত হয়েছে তাঁর অভিনয়। মঞ্চনাটক প্রসঙ্গে সম্পদের সঙ্গে কথা বলেছেন শ্রাবণী রাখী

থিয়েটারে এক যুগ পার করলেন। এখন নিজেকে নিয়ে ভাবলে কোন কথাগুলো মনে হয়?

কিশোরবেলার কথা মনে পড়ে। তখন আমরা বুয়েটের আজাদ স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতাম। বুয়েট অডিটরিয়ামে কর্মচারীদের এক অনুষ্ঠানের নাটিকায় বাউলের ভূমিকায় অভিনয়ের পাশাপাশি ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি পড়ার কথা ছিল আমার। আমি মঞ্চেও উঠেছিলাম। নাম ঘোষণার পর বাবা গর্ব করে আমাকে দেখিয়ে তাঁর স্যারকে বলেছিলেন, এটা আমার ছেলে! কিন্তু আমি সবকিছু গুবলেট করে ফেলি। বাবা সেদিন সেই একতারা দিয়ে আমাকে পেটাতে-পেটাতে বাসায় নিয়ে আসেন। বাবার মৃত্যুর পর আমি বাবাকে খুঁজতাম। বাবা অভিনয়টা পছন্দ করতেন। একদিন আমি থিয়েটারটা শুরু করি। এখন মনে হয়, বাবা থাকলে ভালো হতো, তিনি দেখতে পারতেন, তাঁর স্বপ্নটা ধীরে ধীরে পূরণ হচ্ছে।

প্রথম দিন মঞ্চে ওঠার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

জহির রায়হানের ‘সময়ের প্রয়োজনে’ ছিল থিয়েটারে আমার প্রথম কাজ। মোহাম্মদ বারীর নির্দেশনায় গ্রামবাসীর চরিত্রে অভিনয় করি। সেখানে আমার সমস্বরে ডায়লগ ছিল ‘কোনদিকে যাব’। এই সংলাপ দিয়েই আমার জার্নি শুরু। এতগুলো বছর পরও আমার নিজের কাছে একই প্রশ্ন ‘কোনদিকে যাব’! আমার প্রথম শোতে যে রকম অনুভূতি হয়েছিল, প্রত্যেকটা শোতে সে রকমই অনুভূতি হয়। প্রথম সংলাপের আগে পর্যন্ত পায়ের নিচে সুড়সুড়ির মতো অনুভূতি হয়, আর মাথায় চলতে থাকে, আমি বোধহয় সংলাপটা ঠিকমতো ডেলিভারি দিতে পারব না। তবে প্রথম সংলাপটা দিয়ে ফেলার পর থেকেই আমি ওই চরিত্রটার সঙ্গে মিশে যেতে পারি।

থিয়েটার আর্ট ইউনিটের ‘আমিনা সুন্দরী’, ‘সময়ের প্রয়োজনে’, ‘না মানুষি জমিন’-এর মতো নাটকে কাজ করেছেন। আপনার পছন্দের কাজ কোনটি?

এ দলের যতগুলো নাটকে কাজ করেছি, প্রত্যেকটা নাটকেই আলাদা অনুভূতি কাজ করে। আমার প্রথম পূর্ণাঙ্গ নাটক ‘না মানুষি জমিন’। ‘আমিনা সুন্দরী’তে আমি ছোট্ট একটা চরিত্র করলেও আমার খুব ভালো লাগত। থিয়েটার আর্ট ইউনিটের সব নতুন ছেলেমেয়ের স্বপ্ন থাকে ‘কোর্টমার্শাল’ ও ‘গোলাপজান’ নাটকে অভিনয় করা। সেই আক্ষেপ আমার ঘুচবে না!

থিয়েটার আর্ট ইউনিট ছেড়ে অনুস্বরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। মঞ্চে কারা আপনাকে তৈরি করেছেন বলে মনে করেন?

থিয়েটার আর্ট ইউনিটে যখন জয়েন করি, তখন আমার কোর্স কো-অর্ডিনেটর ছিলেন সাইফ সুমন ভাই। থিয়েটারে আমার গুরু তিনি। রোকেয়া রফিক বেবি, মোহাম্মদ বারী ও সাইফ সুমন—এই তিনজন মানুষের কাছে আমি বেশি শিখেছি। অনুস্বর গঠনের পর সাইফ সুমন ভাই আরও টেক কেয়ার করলেন, সুযোগ দিলেন, আমাকে নিয়ে কাজ করলেন, আমাকে তৈরি করলেন।

অনেকেই বলেন আপনি অনুস্বরের ‘সম্পদ’। দলের কাছে নিজের এতটা আস্থা বা নির্ভরতা তৈরি কতটা কঠিন ছিল?

কঠিন কখনোই ছিল না। অনুস্বর এমন একটা দল, যেখানে সবার একটা স্পেস অলরেডি ক্রিয়েট করা। যেমন, অনুস্বরের নিজস্ব ফ্লোর আছে, স্টুডিও আছে, লাইব্রেরি আছে, এখানে বাচিকের ক্লাস হয়। আমরা গানের স্বর নিয়ে কাজ করি। নিজেকে যদি একটা মানুষ থিয়েটারে তৈরি করতে চাই, আমি মনে করি অনুস্বরের চেয়ে ভালো দল কমই আছে। আমি অনুস্বরের ‘সম্পদ’, কথাটা আমাকে গর্বিত করে। আমি এখন অনুস্বরের সহকারী দপ্তর হিসেবে আছি। আমার বস প্রশান্ত হালদার। তিনি শিখিয়েছেন থিয়েটারের সার্বিক কাজ কীভাবে হয়, কীভাবে ভালো করা যায়।

অনুস্বরের বেশির ভাগ প্রযোজনায় আপনাকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা যায়। কোন চরিত্রটি আপনার বেশি পছন্দের?

আমার করা সব চরিত্রই আমার পছন্দের। তবে ‘মহাশূন্যে সাইকেল’ করার আগ পর্যন্ত ‘স্বপ্নভূক’-এর কবিছায়া চরিত্রটা আমাকে খুব টানত। আমার প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘তিনকড়ি’ আমাকে টানত যতক্ষণ পর্যন্ত আমি ‘স্বপ্নভূক’ করিনি। কিন্তু ‘মহাশূন্যে সাইকেল’ করার পর থেকে রেজাউল করিম আমাকে টানছে।

নতুন চরিত্রে অভিনয়ের আগে নিজেকে কীভাবে তৈরি করেন?

প্রথমে খোঁজার চেষ্টা করি চরিত্রটির কথা বলার স্টাইল কেমন। কোনো নাটকেই আমার ডায়লগ ডেলিভারি প্যাটার্ন এক রকম থাকে না। চেষ্টা করি কথা বলার ধরনটা যেন আলাদা হয়। চরিত্রটা কীভাবে হাঁটবে, কীভাবে হাত-পা নাড়াবে, কীভাবে লুক দেবে—এসব ভাবতে ভাবতে যখন আমি পেয়ে যাই চরিত্রটা এইভাবে কথা বলে, তারপর থেকেই আমি বাকিগুলো গুছিয়ে ফেলতে পারি।

নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের সময় কোন মুহূর্তটাকে সবচেয়ে কঠিন মনে হয়?

যখন ব্ল্যাংক হয়ে যাই! দৃশ্যে হয়তো আমার কো-অ্যাক্টরও নেই, আমার স্বগতউক্তি চলছে আর আমি ডায়লগ ভুলে গেছি! সেই অবস্থা থেকে বের হওয়ার যে ব্যাপারটা। এমন মুহূর্তে মনে হয় যেন পুরো পৃথিবীটা জগদ্দল পাথর হয়ে আমার মাথার ওপর চেপে বসেছে, পায়ের নিচে মাটি ভেদ করে আমি ডেবে যাচ্ছি!

‘বিবিধি শোক অথবা সুখ’ একটি স্টুডিও প্রডাকশন। মঞ্চে আর স্টুডিওতে মঞ্চায়নের তফাতটা কী?

যখন মঞ্চে কাজ করি তখন একটু লাউডলি কথা বলি আর স্টুডিওতে দেখবেন দর্শক মাত্র দুই ফুট দূরে বসা, এই নাটকটি যেমন একটা ড্রয়িংরুমে। সেখানে আমরা পাশাপাশি যেভাবে কথা বলি সেইভাবে মেইনটেন করার চেষ্টা করি। এখানে ৩৫ জন দর্শক বসতে পারেন। আমরা চেষ্টা করি সবাই যেন শুনতে পান। যেন লাইভ মনে হয়, দর্শকের যেন মনে হয় তাঁরা এই ঘরেরই অংশ।

অভিনেতা না হলে কী হতেন?

অভিনেতা না হলে আমি হয়তো একজন কামলা হতাম।

জীবিকার জন্য আর কী করছেন?

দীর্ঘ ১৬ বছর রিয়েলএস্টেটে কাজ করেছি, সাইবার ক্যাফের ম্যানেজারের কাজ করেছি, ব্যবসা করার চেষ্টা করেছি, আরজে হিসেবে কাজ করেছি, এখন চাকরি করছি পাশাপাশি ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করি বঙ্গ বিডি, ধ্বনিচিত্র, সাউন্ড প্রিন্টার, সিভিএম, দুরন্ত টিভি ও দীপ্ত টিভিতে।

কয়েকটি সিনেমার পাশাপাশি টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন। পর্দায় নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে আছে?

অবশ্যই আছে। বিষয়টা এমন নয় যে আমি কাজ পাচ্ছি তবু করছি না। সুযোগের অপেক্ষায় আছি। টুকটাক কাজ করার চেষ্টা করছি। যেখানেই অডিশন কল পাই, যাই। আমি ভালো কনটেন্টে কাজ করতে চাই, ভালো ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করতে চাই, একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।

থিয়েটারে যারা আসতে চায় তাদের কী বলবেন?

থিয়েটারে আসতে চাইলে মেনে নিতে হবে, এখানে দৃশ্যমান কিছু পাওয়া যায় না। অনেকেই থিয়েটারে আসেন তারকা হওয়ার আশায়। কিন্তু থিয়েটার তারকা হওয়ার জায়গা না, ভালো মানুষ হওয়ার জায়গা। থিয়েটারে এসে শিখেছি মানুষ কীভাবে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়, মানুষ কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। নতুন যারা থিয়েটার করতে চায়, তারা যেন মনোযোগ দিয়ে থিয়েটারটা করে।

ষাট বছর আটকেছেন ৩০-এ, যা বললেন শাহরুখ

সঞ্জয়ের সিনেমায় মোশাররফ করিম ও শরিফুল রাজ

অস্কারে মনোনয়ন পাওয়া সিনেমাগুলো দেখা যাবে যেখানে

চ্যানেল আইয়ে আজ থেকে সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘আপন মানুষ’

কঙ্গনার ‘ইমার্জেন্সি’তে শেখ মুজিবুর রহমানের সংলাপ নিয়ে বিতর্ক

ছুরির আঘাতে আহত হননি সাইফ আলী খান, তদন্তে নতুন মোড়

কেন সন্ন্যাসী হলেন বলিউড তারকা মমতা কুলকার্নি, কিছু বিশেষ তথ্য

ঠাকুরগাঁওয়ে ধারণকৃত ‘ইত্যাদি’র আলোচিত পর্বটি আসছে

নতুন রেকর্ড গড়ল রোজি-ব্রুনোর ‘আপাতে’

শোরুম উদ্বোধনে বাধা পেয়ে পরীমণির প্রশ্ন, ‘নিরাপদ নই কেন আমরা?’

সেকশন