ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
পরীক্ষার আগে অভিভাবকেরা সাধারণত ডিম খেতে নিষেধ করেন। এটি বহু দিন ধরে প্রচলিত একটি ধারণা। ধারণা করা হয়, পরীক্ষার আগে ডিম খেলে মাথা গুলিয়ে যাবে, কেউ কেউ আবার ডিমের আকারের সঙ্গে পরীক্ষার নম্বরের সম্পর্ক আছে মনে করেন! এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিভিন্ন সময় পোস্ট হতে দেখা গেছে।
কিন্তু আসলেই কি ডিম খেলে পরীক্ষা খারাপ হয়; এটির বাস্তব কোনো ভিত্তি আছে কি। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন উৎস থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
এ বিষয়ে হেলথ লাইনের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই নিবন্ধে মস্তিষ্কের বিকাশ এবং পরীক্ষার আগে সবচেয়ে ভালো ৯টি খাবারের কথা বলা হয়। এর মধ্যে আছে— বেরি, সাইট্রাস জাতীয় ফল, ডার্ক চকলেট ও কোকোজাত খাদ্যপণ্য, বাদাম, ডিম, অ্যাভোকাডো, মাছ, বিটস এবং লাল, সবুজ ও কমলা রঙের শাকসবজি।
ডিম সম্পর্কে হেলথলাইন জানায়, ডিমে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি রয়েছে। এ কারণে অনেকেই ডিমকে প্রকৃতির মাল্টিভিটামিন হিসেবে উল্লেখ করেন। ডিমে ভিটামিন বি ১২, কোলিন এবং সেলেনিয়ামসহ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর দরকারি পুষ্টি রয়েছে।
এ ছাড়া ডিমে লুটেইন থাকে। এটি চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়ায়।
বিবিসি গুড ফুড–এ ‘পরীক্ষার আগে কী খাবেন’ বিষয়ক একটি প্রতিবেদনেসবচেয়ে ভালো খাবারের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। মোট ৫টি খাবারকে সামনে রেখে তালিকাটি সাজানো হয়েছে। এই তালিকায় ডিমকে ২ নম্বরে রেখে বলা হয়, ‘ডিম হচ্ছে খাদ্যতালিকায় থাকা কোলিনের সেরা উৎসগুলোর মধ্যে একটি। অথচ ডিম নিয়েই কম আলোচনা হয়। ডিম কোষের ঝিল্লি গঠন এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ানোসহ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
চিকিৎসা বিষয়ক ওয়েবসাইট উইনওয়ার্ড–এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিম থেকে অন্তত ১০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলিন (প্রোটিন সংশ্লেষে জরুরি পুষ্টি), প্রয়োজনীয় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যাবে। ফ্যাটি অ্যাসিড স্মৃতিশক্তি বাড়ানো, কাজে মনোযোগ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া, ডিম ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, আয়োডিন এবং আয়রনের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিরও বড় উৎস।
এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষার আগে অনেকে ডিম খেতে মানা করেন কেন?
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট মেডিকেল নিউজ টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকের শরীর ডিমের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। তাঁরা ডিম খাওয়ার পর অস্বস্তি বোধ করেন। এর কারণে শরীরে ফোলাভাব, পেটে মোচড়, বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে। আবার অনেকের ডিম হজমে সমস্যা হয়। যাদের এমন সমস্যা আছে তাঁরা ডিমের সাদা অংশ বা কুসুম অথবা উভয়ই হজম করতে পারেন না। আবার অনেকের ডিমে অ্যালার্জি থাকে।
হেলথ লাইনের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকলেও, খাবারের কোলেস্টেরল সবার রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ায় কিনা তা নিয়ে মিশ্র পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষের জন্য প্রতিদিন ডিম খাওয়া অনেকটাই নিরাপদ এবং এটি প্রোটিন ও ভিটামিনের একটি কার্যকরী উৎস। তবে, উচ্চ কোলেস্টেরলে যারা ভুগছেন, তাঁদের ডিম খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সুতরাং, ডিম খেলে পরীক্ষা খারাপ হবে, এমন ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়, যদি না পরীক্ষার্থীর ডিমে অ্যালার্জি থেকে থাকে। বরং বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষার আগে ডিম খেতে বলেছেন। তবে যাদের ডিম হজমে সমস্যা হয় বা অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাঁদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।