ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকারকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার সঙ্গে চলছে মিথ্যা প্রচারণাও। তেমনই একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কিছু লোক মানুষকে নির্যাতন করছে। ভিডিওর পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, ‘ড. ইউনূস ক্ষমতা দখলের পর বাংলাদেশ একটি ভয়ংকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সে ও তার গুন্ডা দল জনগণকে নির্যাতন করছে। (বাংলায় অনূদিত)।’ ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে কয়েকজন মিলে মারধর করতে দেখা গেছে।
মো. জামাল হোসাইন (MD Zamal Hossain) নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে দেওয়া পোস্টটি বেশি ভাইরাল। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি রিচ পেয়েছে ভিডিওটি এবং এতে ৭০টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। পাশাপাশি ৪০টি রিপোস্ট এবং ৩০টির বেশি কমেন্ট পেয়েছে এই পোস্ট। এসব কমেন্টে কোনো কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে ‘ভিডিওটি ভারতের’ বলে দাবি করা হয়। আবার অনেকে সত্য মনে করে কমেন্ট করেছে। শরিফ (Sharif) নামে একটি অ্যাকাউন্ট লিখেছে, ‘খুব দুঃখজনক। (বাংলায় অনূদিত)’
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনে একই দৃশ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২৪ সালের ৯ জুলাই তারিখে প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে রুমের জানালা ও দেওয়াল, আশপাশে থাকা মানুষ, পেছনের ডেস্ক এবং রুমের পরিবেশের একই সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কামারহাটি এলাকায় একটি ক্লাবের ভেতরে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতার সহযোগীরা একজন নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি পুরোনো ভিডিও প্রকাশ পায়, যা নিয়ে তখন পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষোভের জন্ম দেয়। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আড়িয়াদহ তালতলা স্পোর্টিং ক্লাবে ঘটেছিল বলে ধারণা করেছেন এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।
একই তথ্যে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া, নিউজ ১৮ এবং লেটেস্টলির প্রতিবেদনে একই ছবি পাওয়া গেছে।
সুতরাং, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, উক্ত মারধরের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পৃক্ততা নেই। প্রকৃতপক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনায় ২০২১ সালে এক নারীকে লাঞ্ছিত করার ভিডিও প্রচার করে ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লোক বাংলাদেশের মানুষকে নির্যাতন করছে’ দাবিতে প্রচার করেছে।