ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
১৬ মাস বয়সী কন্যা জাইলেনকে একা ঘরে রেখে ১০ দিনের অবকাশে গিয়েছিলেন ক্রিস্টেল ক্যান্ডেলারিও নামের এক নারী। ক্রিস্টেল যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডের বাসিন্দা। ঘটনাটি ২০২৩ সালের জুনের। অবকাশ কাটিয়ে বাড়ি ফিরে সন্তানকে অচেতন পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে ফোনকল করেন। তবে পুলিশসহ জরুরি সেবাদানকারীরা পৌঁছার আগেই ক্রিস্টেল তাঁর মেয়ের জামা–কাপড় পরিবর্তন করেন এবং দাবি করেন মাত্রই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতে কন্যা হত্যার দায় স্বীকার করেন ক্রিস্টেল। তাঁকে সাজাও দিয়েছে আদালত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, জাইলেনের মা ক্রিস্টেলের কঠিন শাস্তির আবেদন করেছিল সবাই। আর তাই তাঁর শাস্তির কিছু দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
‘শ্রাবনী মৃধা (Srabani Mridha)’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) এমন ক্যাপশনে একটি ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। এতে আজ রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৮৭ হাজার রিয়েকশন পড়েছে। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৬৮ লাখ বার এবং শেয়ার হয়েছে ৬ হাজারের বেশি।
ভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য রিয়েল নিউজ নেটওয়ার্কে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি। এই প্রতিবেদনে যুক্ত ভিডিওটির সঙ্গে সম্প্রতি ভাইরাল ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর। তিনি মানসিক রোগী। কারাগারে সংশোধনে নিযুক্ত কর্মকর্তার দিকে থুতু ছোড়ার অভিযোগে তিনি নয় মাস জেলে ছিলেন।
পরে আরও খুঁজে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ফনিক্স নিউ টাইমসে ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই তরুণীর নাম ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়া। তিনি গুরুতর মানসিক অসুস্থতা এবং অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।
মানসিক অসুস্থতায় ভোগার সময় জেলে সংশোধনে নিযুক্ত কর্মকর্তার দিকে থুতু ছোড়ার দায়ে ২০১৯ সালে নয় মাস তিনি জেলে খেটেছেন। তবে ২০২০ সালে গ্লোরিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয় এবং তাঁর মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তবে মুক্তির আগে তাঁর বিরুদ্ধে আরও দুটি ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছিল।
যেই অভিযোগে গ্লোরিয়া নয় মাস কারাগারে ছিলেন, সেই থুতু ছোড়ার ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও ফনিক্স নিউ টাইমসের প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়াকে সংশোধনে নিযুক্ত কর্মকর্তারা বিছানায় শুইয়ে হাতকড়া বাঁধছেন। ভিডিওটির ১১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে তিনি এক কর্মকর্তার দিকে থুতু ছুড়ে মারেন।
শিশুটির মাকে কি সাজা দিয়েছে আদালত?
ক্রিস্টেল ক্যান্ডেলারিওর সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে নেওয়ার পর ওহাইওর ক্লিভল্যান্ডের একটি নিম্ন আদালত গত মার্চে রায় দেয়। রায়ে ক্রিস্টেল ক্যান্ডেলারিওকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণায় আদালতের বিচারক ব্রেন্ডন শিহান বলেন, জাইলেনের মৃত্যুকে সাধারণ ভুল বলার সুযোগ নেই। ক্যান্ডেলারিওর সুযোগ ছিল মেয়েকে বাঁচানোর। কিন্তু তিনি নিজের সন্তানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।