‘লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ! মসজিদের ভিতর ইফতার নয়, এ বছর রমজানেও সৌদিতে নিয়মের বেড়াজাল!’ এমন ক্যাপশনে ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘এই সময়’-এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। পোস্টটির সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটি কমেন্ট বক্সে তাদের একটি প্রতিবেদনের লিংকও যুক্ত করে দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মসজিদের অন্দরে ইফতার না করা, লাউডস্পিকারে আজান না বাজানোসহ একাধিক নিয়মাবলি জারি করা হয়েছিল সৌদি আরব সরকারের তরফে। ২০২৩ সালে এই কঠোর বিধিনিষেধগুলি আরোপ করা হয় রমজান মাসের সময়। এবারেও কি একই পথে হাঁটবে মক্কা-মদিনার এই দেশটি?’
এই সময়ের পোস্টটি ফেসবুকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকেও ছড়ানো হয়েছে।
এই সময়ের প্রতিবেদন ও ফেসবুক পোস্টটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে সৌদি আরবের মিনিস্ট্রি অব ইসলামিক অ্যাফেয়ার্সের ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ৩ মার্চে করা একটি টুইট পাওয়া যায়।
তবে টুইটটির ৬ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়, মসজিদে ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন এবং সেগুলোর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিশেষ করে মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিদের নামাজ পড়ার সময় এসব ক্যামেরা ব্যবহার করা যাবে না এবং কোনো প্রচারমাধ্যমে নামাজ সম্প্রচার করা যাবে না। ৯ নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়, দেশটিতে রমজানে রোজাদারদের জন্য মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের তত্ত্বাবধানে মসজিদের আঙিনা বা চত্বরে ইফতারের আয়োজন করা যাবে। তবে ইফতার শেষ হওয়ামাত্র মসজিদের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে বলে নির্দেশনাটিতে বলা হয়।
আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজে গতকাল (২৩ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও আসন্ন রমজান নিয়ে প্রায় একই তথ্য জানানো হয়। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, মিনিস্ট্রি অব ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় মসজিদের ভেতর নামাজের স্থানে ইফতারের আয়োজন করা যাবে না। এর পরিবর্তে মসজিদের আঙিনা বা চত্বরে ইফতারের আয়োজন করা যাবে। এ ছাড়া কোনো মাধ্যমে নামাজের ভিডিও সম্প্রচার করা যাবে না।
এই প্রতিবেদনেও সৌদি আরবে লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে আরও খুঁজে সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেটে দেশটিতে মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহার প্রসঙ্গে সরকারি নির্দেশনা বিষয়ে ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
ওই সময় গালফ নিউজে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ২০২৩ সালে মসজিদে আজানের জন্য ব্যবহৃত লাউডস্পিকারের সংখ্যা সর্বোচ্চ চারটি নির্ধারণ করে দেয় সৌদি সরকার। এর আগে ২০২২ সালে মন্ত্রণালয় রমজান মাসে মসজিদে লাউডস্পিকারের ভলিউমের মাত্রা সীমিত করার নির্দেশনা দেয়। বলা হয়, লাউডস্পিকারের ভলিউম সর্বোচ্চ মাত্রার এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত রাখা যাবে। কারণ, মসজিদের বাইরে ব্যবহৃত লাউডস্পিকারের অতি উচ্চমাত্রার শব্দ দুর্বল, বয়স্ক এবং শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং অন্যান্য মসজিদে নামাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
লন্ডনভিত্তিক আরেকটি সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট মনিটরে ২০২৩ সালের ৮ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সময় সৌদি আরবের ইসলামবিষয়ক মন্ত্রণালয় আজানের জন্য ব্যবহৃত লাউডস্পিকারের সংখ্যা এবং এগুলোর ভলিউম কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছে।
এসব প্রতিবেদনের বাইরে সৌদি আরবে লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরবে মসজিদে লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ করে কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি। এ ছাড়া দেশটিতে মসজিদে ইফতার আয়োজনেও কোনো বাধা নেই।