ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত চাকার দুটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ট্রেনের একটি চাকা ভেঙে দুই টুকরা হয়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ভাঙা অংশ রেল লাইনে পাথরের ওপরে পড়ে আছে। বাকি অংশটুকু রেলের ওপরে ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত আছে। ‘জামায়েত বদ্ধজীবন চেতনায় বদর’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল রোববার (২ জুন) ছবি দুটি ফেসবুকে পোস্ট করে দাবি করা হয়, এগুলো ভারত থেকে কেনা ট্রেনের চাকা। পোস্টটির ক্যাপশনে ট্রেনের চাকাগুলোকে তুলনা করা হয়েছে ‘শরীফ মেলামাইন’–এর সঙ্গে।
পোস্টটিতে আজ সোমবার (৩ জুন) রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার রিয়েকশন পড়েছে, শেয়ার হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০। পোস্টটিতে মন্তব্য পড়েছে সাড়ে চার শতাধিক। ‘জিয়া সাইবার ফোর্স–জিসাফো’ নামের আরেকটি পেজ থেকে ছবিগুলো শেয়ার করে লেখা হয়েছে, ‘দরদী ভারত থেকে কেনা ট্রেনের কোচের চাকা, একবার অবস্থাটা দেখুন? ভারত আমাদের দেশটাকে গিলে খেতে চাচ্ছে।’
অনেক ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকেও ছবি দুটি পোস্ট করা হয়েছে। মাসুম বিল্লাহ নামের একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি দুটি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘ভারত থেকে কেনা ট্রেনের চাকা (শরীফ মেলামাইন)। বন্ধু দেশ ভারত, রেলওয়েকে নকল চাকা দিয়ে জয় বাংলা করে দিয়েছে।’ যদিও পোস্টগুলোর কোথাও এটি বাংলাদেশের কোন ট্রেনের, কোন স্থানে, কখন এই ঘটনা ঘটেছে— সেসব বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
ছবি দুটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
বাংলাদেশি কোনো ট্রেনে এমন ঘটনা ঘটলে স্বভাবতই দেশীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হতো। প্রাসঙ্গিক অনুসন্ধানে দেশীয় কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন কোনো ঘটনা সম্পর্কে জানা যায় না।
রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ‘রাজেন্দ্র বি. আকলেকার’ নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ছবি দুটি পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে পাওয়া এটিই ছবিগুলোর সম্ভাব্য সবচেয়ে পুরোনো উৎস। রাজেন্দ্র বি. আকলেকারের পরিচয় সম্পর্কে তাঁর এক্স প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তিনি ভারতের মুম্বাই ভিত্তিক ‘মিড ডে’ নামের একটি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক। তিনি ভারতের রেলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে একাধিক বইয়ের লেখক।
রাজেন্দ্র বি. আকলেকার গত ৩০ মে (শুক্রবার) ছবি দুটি টুইট করেন। তাঁর টুইটটি আজ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত ১ লাখ ২৭ হাজার বার দেখা হয়েছে। টুইটটিতে তিনি লেখেন, ‘শকিং! মালবাহী ট্রেনের লোকোমোটিভের (ট্রেনের ইঞ্জিন) চাকা দুই ভাগ হয়ে গেছে। ট্রেনটি দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা থেকে বক্তারনগর যাচ্ছিল। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রেলের আসানসোল ডিভিশনে। তবে এই ঘটনায় মেইন লাইনে ট্রেন চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি এবং হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
প্রসঙ্গত, কোচ ও লোকোমোটিভের উল্লেখযোগ্য অংশ ভারত থেকে কিনেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ৩ এপ্রিল ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০ ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ১৯৫ টাকা। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বিআইটিইএস লিমিটেড ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজগুলো সরবরাহ করবে। ২০২৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি ডিজেল চালিত ব্রডগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) অনুদান হিসেবে দেয় ভারত সরকার।