অনলাইন ডেস্ক
গ্রিক বংশোদ্ভূত মাকিস দাসিজেনিসের বয়স বর্তমানে ৬৯ বছর। তবে এই বয়সেই যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে যে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে নায়ক বনে গেছেন তিনি। কারণ, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রলয়ংকরী দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের বাড়ি তো বটেই; দুই প্রতিবেশীর বাড়িও আগুনের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন তিনি।
রয়টার্সের একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির আল্টাডেনা এলাকায় বাস করেন দাসিজেনিস। ইতিহাসের ভয়ংকরতম দাবানলে এই এলাকা এখন পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে এর মাঝেও পাশাপাশি তিনটি বাড়ি এখনো বহাল তবিয়তেই আছে। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন দাসিজেনিস।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ আগুনে সবকিছু যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, সেই সময়টিতে অন্যদের মতো দাসিজেনিসও সুরক্ষার জন্য তাঁর বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তবে টেলিভিশনের খবরে আগুনের ভয়াবহতা দেখে তিনি তাঁর বাড়িটি বাঁচাতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
দাসিজেনিস বলেন, ‘আমি যখন ফিরছিলাম, দেখলাম, কেউ আর পেছনে নেই। পুরো বিষয়টি মনে হচ্ছিল একটি অবাস্তব পরিস্থিতি।’
তিনি যখন ফিরে এলেন, আগুন তখনো তাঁর বাড়িটিকে স্পর্শ করেনি। তবে খুব দ্রুতগতিতেই দাবানল ধেয়ে আসছিল বাড়িটির দিকে।
এই অবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়িতে থাকা একটি পানির পাম্প আঙিনায় স্থাপন করেন বৃদ্ধ। আর এই পাম্পের পানির উৎস হিসেবে বেছে নেন প্রতিবেশীর একটি সুইমিংপুলকে। এরপর আগুন যখন ধেয়ে এল, সেই পাম্পের সাহায্যে অবিরাম পানি ছুড়ে গেছেন তিনি। যৌবনে ফায়ার সার্ভিসেে কাজের অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে ভীষণ কাজে দিয়েছে তাঁর।
সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে দাসিজেনিস বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, আমি এটা করতে পারব। আমি বোকা নই—জানতাম, শুধু সম্পত্তির জন্য ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু চেষ্টা না করলে আমি সারা জীবন আফসোস করতাম।’
এভাবে তিনটি বাড়িকে আগলে রেখে ধেয়ে আসা আগুনের বিরুদ্ধে টানা ছয় ঘণ্টা পানি ছুড়ে গেছেন দাসিজেনিস। শুধু বাড়ি নয়, নিজেকে বাঁচানোর জন্য হলেও সেই সময়ে পানি ছুড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাঁর। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের সময় অনেক কিছু মাথায় আসে। তবে প্রধান ভাবনা থাকে, কীভাবে টিকে থাকা যায়। আমিও শুধু বেঁচে থাকার কথা ভাবছিলাম।’
পরিশেষে, দুই প্রতিবেশীর বাড়িসহ নিজের বাড়ি রক্ষা করতে পেরে দাসিজেনিস ভীষণ গর্বিত। তিনি মনে করেন, এই লড়াইয়ে স্বয়ং ঈশ্বর তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি গ্রিসে ফিরে একটি মোমবাতি জ্বালাব—ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য।’