অনলাইন ডেস্ক
গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিন জিম্মি ফেরত পাওয়ার পর ইসরায়েলের কারাগারগুলোতে বন্দী থাকা ৯০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনের মধ্যে ৬৯ জন নারী ও ২১ জন কিশোর বয়সী ছেলে। তাঁরা পশ্চিম তীর ও জেরুসালেমের বাসিন্দা। ইসরায়েলের প্রিজন সার্ভিস তাদের পশ্চিম তীরে মুক্তি দিয়েছে। আজ সোমবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
চুক্তিতে বলা আছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দফায় হামাস ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে। চুক্তির কার্যকরের প্রথম দিনে গতকাল রোববার হামাস তিন জিম্মিকে মুক্তি দেয়। তারপর ইসরায়েল ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়।
ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন ফিলিস্তিনের রাজনীতিবিদ ও সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য খালিদা জাররার। আজ সোমবার সকালে তিনি ফিলিস্তিনের রাজধানী রামাল্লায় পৌঁছানোর সময় তাঁকে ঘিরে পরিবারের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উল্লাসে মেতে ওঠেন।
খালিদা অধিকৃত পশ্চিম তীরের পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) নেতা। তাঁর দলকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ফিলিস্তিনি বন্দীদের একজন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, রোববার ভোর ৩টার দিকে তাঁর বন্দী জীবনের সমাপ্তির শুরু হয়। তখন তাঁকে তিনি যে কারাগারে ছিলেন, সেখান থেকে ইসরায়েল-গাজা সীমান্তের কাছে আরেকটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
গত বছরের মার্চে ইসরায়েলি সৈন্যদের হাতে বন্দী হওয়া ফিলিস্তিনি সাংবাদিক বুশরা আল-তাওয়িল বলেন, কিছু বন্দীরা একটি শুনানিতে অংশ নিয়ে ফেরার পর তিনি প্রথম জানতে পারেন, তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে। আইনজীবীরা তাঁদের জানিয়েছিলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে এবং বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা খুবই কঠিন ছিল। তবে আলহামদুলিল্লাহ, আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে যেকোনো মুহূর্তে আমাদের মুক্তি দেওয়া হবে।’
সাংবাদিক বুশরা তাঁর বাবার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তিনি এখনো ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে তাঁকেও পরবর্তীতে মুক্তি দেওয়া হবে।
এদিকে, জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ৬৩০ টির বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেন, গতকাল রোববার ৬৩০ টিরও বেশি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। যার মধ্যে কমপক্ষে ৩০০টি উত্তর গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে গিয়েছে। ১৫ মাসের লাগাতার যুদ্ধের পরে মানবিক প্রয়োজনগুলো এখন চরম পর্যায়ে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস সতর্ক করে বলেন, গাজার মানুষের সামনের পথ বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। এই চুক্তি তাদের জন্য আশার আলো নিয়ে এলেও গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিপর্যয় কঠিন ভবিষ্যৎ নিয়ে আসছে।