অনলাইন ডেস্ক
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘নীতি নির্ধারক নেতা’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তিনি ‘ন্যায্য শান্তি’ আনতে পারবেন। তবে ট্রাম্প শান্তি আনতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান।
কিয়েভের অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্প বাস্তবসম্মত কোনো সমাধান আনতে পারবেন না, আবার কেউ কেউ তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ শেষ হওয়ারও আশা করছেন।
ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তিরক্ষক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিকর বৈদেশিক যুদ্ধ থেকে দূরে রাখবেন। তবে তিনি তাঁর অভিষেক ভাষণে ইউক্রেনের প্রসঙ্গ বা ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনায় আসতে কীভাবে রাজি করাবেন, সেই বিষয়ে কিছু বলেননি।
অভিষেকের পর হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প দাবি করেন, যুদ্ধের ফলে ১০ লাখ রুশ সেনা মারা গেছে এবং উভয় পক্ষের জন্যই যুদ্ধ থামানো উচিত। তিনি বলেন, ‘পুতিন রাশিয়াকে ধ্বংস করছেন। তাঁর একটি চুক্তি করা উচিত। জেলেনস্কি চুক্তি করতে চান।’
গার্ডিয়ানের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মঙ্গলবার কিয়েভের লুকিয়ানিভস্কা মেট্রো স্টেশনের বাইরে মানুষজন ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
২৩ বছর বয়সী দোকান কর্মচারী ভ্যালেরিয়া বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি অসম্ভব। ট্রাম্প শুধু বকবক করেন। তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এটি কখনোই সম্ভব নয়।’
অবসরপ্রাপ্ত পদার্থবিদ মাইকোলা বলেন, ‘আমি টিভিতে ট্রাম্পের অভিষেক ভাষণ দেখেছি। তিনি আমাকে মুগ্ধ করেছেন। আমাদের যুদ্ধ থামানো দরকার। আমি মনে করি, তিনি সত্যিই কিছু করতে পারবেন। তিনি ইসরায়েল ও গাজায় যুদ্ধবিরতি করেছেন।’
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কথা হলো—ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতা’ নিয়ে আশাবাদী তিনি। সোমবার ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘তাঁর শক্তির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার নীতি আমেরিকার নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি এবং ন্যায্য শান্তি অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে।’
শেষদিকে জেলেনস্কি এবং বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা উত্তপ্ত ছিল। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, বাইডেন প্রশাসন দেরিতে এবং অপর্যাপ্ত সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে।
অনেকে মনে করেন, ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধকে দ্রুত শেষ করতে চান এবং এটিকে ইউরোপের একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যায় পরিণত করতে চান। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ট্রাম্প হয়তো ইউক্রেনকে মার্কিন সামরিক সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারেন।
কিয়েভের সাংবাদিক ক্রিস্টিনা বারদিনস্কিখ বলেন, ‘ট্রাম্প ইউক্রেন নিয়ে বেশি ভাবেন না। আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা।’
৭০ বছর বয়সী পেনশনভোগী পেট্রো গ্রিগোরোভিচ বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, ইউক্রেনকে ধ্বংস না করে পুতিন থামবেন। তবে এখনো একটু হলেও আশা আছে। আমি চাই যুদ্ধ শেষ হোক। এত শান্তিপ্রিয় মানুষ মারা গেছে।’