অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা: ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের পশ্চিম গোদাভারি এলাকার বাসিন্দা আঞ্জি বাবু পেশায় গাড়িচালক। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন স্থানীয় একটি সরকারি হাসপাতালে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার তিনদিন আগে আঞ্জি বাবুর চোখ ব্যাথা শুরু হয়। পরে তাঁর স্ত্রী কল্যাণী একটি ভিডিও করে চিকিৎসার জন্য আবেদন জানান।
ওই ভিডিওতে কল্যাণী বলেন, দয়া করে আমাদেরকে সাহায্য করুন। আমাদের কাছে আর টাকা নেই। তাঁকে ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো না। চিকিৎসকরা বলেছেন আঞ্জি বাবুর এক চোখ অপসারণ করতে হবে। এখন তাঁর দুই চোখেই ব্যাথা।
এই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর আঞ্জি বাবুকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিজয়ওয়াদার একটি বেসরকাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা বলেছেন, ওষুধ কাজ করছে কিনা তা নিয়ে তাঁদের দুই দিন আঞ্জি বাবুকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
শুধু অন্ধ্রপ্রদেশ নয় ভারতজুড়েই দাপট দেখাচ্ছে এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। এর মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সবচেয়ে বেশি প্রকোপ মহারাষ্ট্রে। সেখানে প্রায় দুই হাজার রোগী এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়েছেন। গুজরাটে এক হাজার ১৬৩ জন রোগী এই ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে। ভারতের মধ্য প্রদেশেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত ২৮১ জন রোগী পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উত্তর প্রদেশ ৭৩ জন এবং তেলাঙ্গানায় ৬০ জন ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগী পাওয়া হেছে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মিউকরমাইকোসিস নামে এক ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ। এতে এরই মধ্যে চোখ ভারতে হারিয়েছেন অনেক করোনা রোগী। এর চিকিৎসাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। পাশাপাশি এই ফাঙ্গাসের প্রতিষেধক আম্ফোটেরিসিন বি-এর সঙ্কট দেখা দিয়েছে ভারতে।
ভারতের দিল্লির সবচেয়ে বড় ওষুধের বাজার ইউসুফ সরাই। সেখানেও মিলছেনা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ওষুধ আম্ফোটেরিসিন বি।
বাবার বন্ধুর জন্য হন্যে হয়ে খুঁজেও আম্ফোটেরিসিন বি ওষুধ পাননি ৩১ বছর বয়সী তরুণ ওয়াধেরা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে তিনি বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ওষুধটি খুঁজলাম, কোথাও পেলাম না।
৪৭ বছর বয়সী চারু গুপ্ত তাঁর বন্ধুর চাচাতো বোনের জন্য আম্ফোটেরিসিন বি অনেক খুঁজেও পাননি। তিনি এনডিটিভিকে বলেন, এই পর্যন্ত ২০টি দোকান খুঁজেছি। একটিতেও এই ওষুধটি পাইনি।
ইউসুফ সরাই এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওষুধটি পাঁচদিন ধরে বাজারে নেই। কমপক্ষে ৫০ জন ক্রেতাকে প্রতিদিন ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
এ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিভিন্ন রাজ্যে ওষুধের সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন রাজ্যে এক লাখ ভায়াল আম্ফোটেরিসিন বি ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। এই ওষুধটি আমদানি করার কথাও ভাবছে সরকার।