হোম > ইসলাম

নবীযুগে নারীদের বিচিত্র পেশা

খসরু রহমান

ইসলামের সোনালি যুগ থেকেই নারীরা আর্থসামাজিক উন্নয়নের অংশীদার হয়েছেন। বিচিত্র পেশায় অংশ নিয়ে সমাজে অবদান রেখেছেন। রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকে হাজার বছরের মুসলিম শাসনের ইতিহাসে নারীরা জ্ঞানচর্চা, সমাজসেবা ও অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা লাভ করেছেন এবং পুরুষদের মতোই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। এখানে মহানবী (সা.)-এর যুগে নারীদের বিচিত্র পেশার কথা তুলে ধরা হলো।

জ্ঞানচর্চা: মহানবী (সা.) বিভিন্নভাবে নারীদের জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং সুযোগ দিয়েছেন। মদিনার নারীরা একবার রাসুল (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘পুরুষেরা আপনার কাছে আমাদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তাই আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দিন। তিনি তাঁদের বিশেষ একটি দিনের অঙ্গীকার করেন। সেদিন তিনি তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং দিকনির্দেশনা দিলেন।’ (বুখারি)

রাসুলের যুগে অনেক প্রাজ্ঞ নারী সাহাবি ছিলেন। নবীপত্নী আয়েশা (রা.)-এর জ্ঞানের কাছে তো অনেক অভিজ্ঞ সাহাবিও হার মেনেছেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের অসামান্য অবদান নিয়ে ৪৩ খণ্ডের বিশাল এক বিশ্বকোষ রচনা করেছেন ক্যামব্রিজ ইসলামিক কলেজের ডিন ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভি। এই গ্রন্থে তিনি ১০ হাজারের বেশি নারী হাদিস বিশারদ ও শিক্ষাবিদের জীবন-কর্ম-অবদান তুলে ধরেন। 

ব্যবসা-বাণিজ্য: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে নারীরা ব্যবসা-বাণিজ্যও করতেন। নারী সাহাবি কায়লা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো এক ওমরাহ আদায়কালে মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি একজন নারী। আমি বেচাকেনা করি। আমি কোনো জিনিস কিনতে চাইলে আমার কাঙ্ক্ষিত মূল্যের চেয়ে কম দাম বলি। এরপর দাম বাড়িয়ে বলতে বলতে আমার কাঙ্ক্ষিত মূল্যে গিয়ে পৌঁছাই। আবার আমি কোনো জিনিস বিক্রি করতে চাইলে কাঙ্ক্ষিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য চাই। এরপর দাম কমাতে কমাতে অবশেষে আমার কাঙ্ক্ষিত মূল্যে নেমে আসি।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে কায়লা, এমন কোরো না। তুমি কিছু কিনতে চাইলে তোমার কাঙ্ক্ষিত মূল্যই বলো, হয় তোমাকে দেওয়া হবে, নয় দেওয়া হবে না।…’ (ইবনে মাজাহ: ২২০৪) 

চিকিৎসা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে নারীরা চিকিৎসক হিসেবেও দক্ষতা অর্জন করেন, যারা শৈল্যবিদ্যায়ও পারদর্শী ছিলেন। আয়েশা (রা.) নিজেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে দক্ষতা অর্জন করেন। উরওয়া (রহ.) বলেন, ‘আমি চিকিৎসাবিজ্ঞানে আয়েশা (রা.) অপেক্ষা দক্ষ মানুষ দেখিনি। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি—খালা, আপনি এই জ্ঞান কোথা থেকে অর্জন করলেন? তিনি বলেন, আমি মানুষকে রোগীর চিকিৎসা করতে দেখেছি এবং তা মনে রেখেছি।’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা: ২ / ১৮২) 

কৃষিকাজ: মহানবী (সা.)-এর যুগে নারীরা কৃষিকাজেও অংশ নিতেন। আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) থেকে দীর্ঘ এক হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, ‘যখন জোবায়ের আমাকে বিয়ে করেন, তখন তাঁর কোনো ধন-সম্পদ ছিল না। এমনকি কোনো স্থাবর জমিজমা, দাস-দাসীও ছিল না; শুধু কুয়া থেকে পানি উত্তোলনকারী একটি উট ও একটি ঘোড়া ছিল। আমি তাঁর উট ও ঘোড়া চরাতাম, পানি পান করাতাম এবং পানি উত্তোলনকারী মশক ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতাম, আটা পিষতাম, কিন্তু ভালো রুটি তৈরি করতে পারতাম না।...রাসুল (সা.) জোবায়েরকে একখণ্ড জমি দিলেন। আমি সেখান থেকে মাথায় করে খেজুরের আঁটির বোঝা বহন করে আনতাম। ওই জমির দূরত্ব ছিল প্রায় দুই মাইল।...’ (বুখারি: ৫২২৪) 

হস্তশিল্প: মহানবী (সা.)-এর যুগে নারীরা হস্তশিল্পের কাজ করেও অর্থ উপার্জন করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সে-ই আমার সাক্ষাৎ পাবে, যার হাত সর্বাধিক লম্বা।’ সুতরাং তারা নিজ নিজ হাত মেপে দেখতে লাগলেন কার হাত বেশি লম্বা। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘অবশেষে আমাদের মধ্যে জয়নবের হাতই সবচেয়ে লম্বা স্থির হলো। কেননা, তিনি হাতের কাজ করতেন এবং দান-খয়রাত করতেন।’ (মুসলিম: ৬০৯৪) 
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী রায়িতা (রা.) হস্তশিল্পে দক্ষ ছিলেন। তিনি বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে তা বিক্রি করতেন এবং উপার্জিত অর্থ দান করে দিতেন। (মুসনাদে আহমাদ: ১৬০৩০) 

লেখক: অনুবাদক ও গবেষক

মিরাজের প্রেক্ষাপট ঘটনাপ্রবাহ ও শিক্ষা

মিরাজ সম্পর্কে প্রচলিত ৩ ভুল বিশ্বাস

কাজা রোজা সম্পর্কে যা জানতে হবে

খলিফা ওমরের সাফল্যের নেপথ্যে ৪ গুণ

ইমানি শক্তি বাড়ে যে ৩ আমলে

নামাজের ইমামতি করতে যে যোগ্যতা দরকার

কোরআনে ইসলাম প্রচারকের অপরিহার্য ৫ গুণ

জানাজা ও কাফনদাফনে অংশ নেওয়ার সওয়াব

হালাল-হারাম নিয়ে সংশয় থাকলে করণীয়

আসরের নামাজ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

সেকশন