আবদুল আযীয কাসেমি
আমাদের চারপাশ ও আর্থসামাজিক বাস্তবতা আমাদের এমন অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে, আমরা মুনাফার বাইরে কিছু ভাবতে পারি না। ফলে নীতি-নৈতিকতা ও সুকুমার গুণগুলো আমাদের কাছে এখন গৌণ বিবেচিত হচ্ছে। এই লাগামহীন মুনাফা চিন্তার কারণে হিংসা, লোভ ও নানা মন্দ স্বভাব আমাদের গ্রাস করছে। আজকের সমাজের নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতির যে ভয়াল চিত্র আমরা দেখছি, তা এই মনোভাবেরই ফসল।
লাভের আশা করা দোষের কিছু নয়। ইসলামে মুনাফা অর্জন হারাম করা হয়নি। তবে সর্বোচ্চ মুনাফা করাকেই জীবনের লক্ষ্য মনে করা এবং এর জন্য নীতি-নৈতিকতা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিসর্জন দেওয়া ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। হালাল-হারাম তোয়াক্কা না করে যেভাবে পারো উপার্জন করো এবং সুখী হও—এ চিন্তা একজন মুমিন কখনো করতে পারেন না। কোরআন-সুন্নাহয় এমন স্বভাবের কঠোর নিন্দা করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এই পার্থিব জীবন খেলাধুলা ছাড়া আর কিছুই নয়। বস্তুত আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন যদি তারা জানত। (সুরা আনকাবুত: ৬৪) রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা, চাদর ও জামাকাপড়ের দাস ধ্বংসের মুখোমুখি। তাকে যদি দেওয়া হয় তবে সে সন্তুষ্ট হয়। আর যদি তাকে না দেওয়া হয় সে সন্তুষ্ট হয় না। (বুখারি: ২৮৮৬) উম্মুল মুমিনিন জুওয়াইরিয়া বিনতুল হারিস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মৃত্যুর সময় স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা, দাস-দাসী—কিছুই রেখে যাননি। শুধু তাঁর বাহন হিসেবে ব্যবহৃত খচ্চর, যুদ্ধাস্ত্র ও মুসাফিরদের জন্য সদকা হিসেবে রেখে যাওয়া এক টুকরো জমি। (বুখারি: ৩৫৯৬)
অন্য হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি জাতির জন্য একটি পরীক্ষার বস্তু ছিল। আমার উম্মতের পরীক্ষার বস্তু হলো সম্পদ।’ (তিরমিজি: ২৩৩৬)
আবদুল আযীয কাসেমি, শিক্ষক ও হাদিস গবেষক