ঢাকা-সিলেটের পর রান উৎসব চলছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেও। চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা খুব একটা হয় না; বরং প্রশংসিতই হয় বেশি। তবে এবার দলগুলোর কাঠগড়ায় জহুর আহমেদের আউটফিল্ড।
বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা এবং আউটফিল্ডের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে; বিশেষ করে এম এ আজিজের অনুশীলন মাঠ নিয়ে হতাশ দলগুলো। সেখানে ব্যাটিং ও বোলিং অনুশীলন করা গেলেও গ্রাউন্ড ফিল্ডিং এড়িয়ে চলতে হচ্ছে বেশির ভাগ খেলোয়াড়কে। জহুর আহমেদের আউটফিল্ডে বল পড়লেই বালু উঠতে দেখা যাচ্ছে নিয়মিত, মাঠের শুষ্কতা ও অসমান ঘাস গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। সামনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট থাকায় জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের খেলতে হচ্ছে অনেক সতর্কতার সঙ্গে।
বিষয়টি নিয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছি না। ১০ দিনের বেশি সময় ধরে তারা ঠিকমতো পানি সরবরাহ করছে না। লবণাক্ত পানি দিয়ে ঘাসের সজীবতা বজায় রাখা কঠিন। আউটফিল্ডের মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। ওয়াসা সপ্তাহে শহরের বিভিন্ন জায়গায় রেশনিং (নির্দিষ্ট পরিমাণে) করে পানি দিচ্ছে।’
টিম হোটেলের কাছেই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকলেও সেটির উইকেট ও আউটফিল্ড নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নয় দলগুলো। কদিন আগে মাঠটি সরকারের কাছ থেকে ২৫ বছরের ইজারা পেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এই স্টেডিয়ামে স্থানীয় ও বয়সভিত্তিক লিগের পাশাপাশি ক্লাব ফুটবল ম্যাচও নিয়মিত আয়োজন হয়। মাঠকে ক্রিকেটের জন্য উপযোগী করে তুলতে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে বাড়তি চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিসিবির সঙ্গে যুক্ত অনেক পরিচালক ও কাউন্সিলর আড়ালে চলে যাওয়ায় মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিসিবির গ্রাউন্ডস বিভাগ ঢাকা থেকে তদারক করেছে এই মাঠে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহীর এক খেলোয়াড় বললেন, ‘চট্টগ্রামে বিপিএল আয়োজন নতুন নয়; তবে এবারের অনুশীলন সুবিধা খুবই নিম্নমানের। মিরপুরের একাডেমি মাঠে কিছুটা গ্রাউন্ড ফিল্ডিং করা গেলেও এখানে সেটা অসম্ভব। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের আউটফিল্ড এবড়োখেবড়ো এবং ঘাসও সমান নয়। জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে সময় বেঁধে অনুশীলন করতে হয়, যা খেলোয়াড়দের প্রস্তুতিকে ব্যাহত করে। ম্যাচের আগে টসের সময় সামান্য গ্রাউন্ড ফিল্ডিং অনুশীলন করাই একমাত্র সুযোগ।’
বিপিএলে কাজ করা একাধিক কোচ, ফিজিও জানিয়েছেন, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের উইকেটও যথেষ্ট মানসম্মত নয়। বল মাঝেমধ্যে হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে, যা ব্যাটারদের জন্য বিপজ্জনক। অনুশীলনের সময় ব্যাটারদের ট্রু উইকেট না পাওয়ায় তাদের কৌশলগত প্রস্তুতিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফিজিওদেরও বাড়তি সতর্কতা নিতে হচ্ছে, যাতে চোটের ঝুঁকি কমানো যায়। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে কিউরেটর জাহিদ রেজা বলেন, ‘এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আমাদের মাত্র দুজন গ্রাউন্ডসম্যান উইকেট তৈরিতে কাজ করে। বাকি লোকবল জেলা ক্রীড়া সংস্থার। মাঠ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এবার পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং ছিল।’
গ্রাউন্ডস রাইটের মোটা কার্পেট ব্যবহারে ক্রিকেটারদের জুতার স্পাইক আটকে গুরুতর চোটের ঘটনাও বাড়ছে। পরশু দুটি ম্যাচে দুজন খেলোয়াড় গুরুতর চোটে পড়েছেন। দিনের প্রথম ম্যাচে ঢাকা ক্যাপিটাল ও সিলেট স্ট্রাইকার্স ম্যাচে ক্যাচ নিতে গিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স অধিনায়ক আরিফুল হক গুরুতর চোট পান। ক্যাপিটালের ব্যাটার থিসারা পেরেরার ক্যাচ ধরতে গিয়ে আরিফুলের পা কার্পেটে আটকে যায়। ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে হাত ও পায়ে আঘাত পান তিনি।
রাতের ম্যাচেও ঘটেছে একই ঘটনা। চিটাগং কিংসের বিপক্ষে মোটা কার্পেটে স্পাইক আটকে চোটে পড়েন দুর্বার রাজশাহীর অলরাউন্ডার রায়ান বার্ল। ম্যাচে ব্যাটিং করাও সম্ভব হয়নি তাঁর। ম্যাচ শেষে তাঁকে সতীর্থদের সহায়তায় কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। রাজশাহী দলের ফিজিও জানিয়েছেন, আজ তাঁর এমআরআই স্ক্যান করা হবে।