বোলিং অনুশীলনের চেয়ে এখন নাহিদ রানা যেন বেশি চিন্তিত ফিটনেস ধরে রাখা নিয়ে! বিপিএলে টানা খেলার মধ্যে আছেন। আগামী মাসে আবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। বোলিং পারফরম্যান্সের সঙ্গে ফিটনেসও খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হচ্ছে নাহিদকে। কাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের জিমে ফিটনেস নিয়ে কাজ করার ফাঁকেই নাহিদ জানালেন আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে তাঁর ভাবনা, ব্যক্তিগত প্রস্তুতি ও ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ রিয়াদ।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত বিপিএল কেমন উপভোগ করছেন?
নাহিদ রানা: আলহামদুলিল্লাহ, বিপিএল ভালো যাচ্ছে। প্রতিটি ম্যাচে নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ব্যাটারদের বিপক্ষে গতি আর কৌশল দিয়ে চাপ তৈরি করতে পারছি, যেটা দারুণ তৃপ্তি দিচ্ছে। আমাদের দলের পরিবেশও অসাধারণ, সবাই সবার জন্য কাজ করছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, টিম ম্যানেজমেন্টের ভালোবাসা আমাকে প্রতি মুহূর্তে অনুপ্রাণিত করছে।
প্রশ্ন: টানা ম্যাচ খেলার মধ্যে আছেন, একটু কি বিশ্রাম নেওয়ার দরকার মনে হয়?
নাহিদ: টানা খেলা আসলেই কঠিন। তবে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে এটা আমাদের জীবনেরই অংশ। ফিজিও এবং ট্রেনাররা আমার ফিটনেস ঠিক রাখতে নিয়মিত কাজ করছেন। রেস্ট অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন তো ম্যাচ খেলতে হয়। আমি নিজ থেকে বিশ্রাম চাইনি। যদিও আমার কাছে সুযোগ আছে বিশ্রাম চাওয়ার। কিন্তু এটা টিম ম্যানেজমেন্টেরও সিদ্ধান্ত। এখন যেহেতু প্রতিটি ম্যাচ খেলছি, তাই পুরোপুরি ফোকাস রাখতে চাই খেলায়।
প্রশ্ন: আপনার ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন আপনি?
নাহিদ: ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের বিষয়টি আমি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার নিশ্চিত করতে এটা জরুরি। আমি ফিজিও এবং কোচদের নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। নিজেদের শরীরকে বোঝা এবং সঠিক সময়ে বিশ্রাম নেওয়াই মূলমন্ত্র। এখন পর্যন্ত আমি পুরোপুরি ফিট এবং সে অনুযায়ী ভালো করার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: রংপুর রাইডার্স টানা ছয়টি ম্যাচ জিতে টেবিলের শীর্ষে। দলের ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনে কোন বিষয়টি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন?
নাহিদ: আমাদের দলের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো দলের মধ্যে ঐক্য আর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। দল থেকে আমাকে যে পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী আমি দলকে ভালো কিছু দিতে চাইছি। দলের সবকিছু হয় খুব পেশাদারি মনোভাবে; যেমনটা জাতীয় দলে হয়। প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজের ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখে; বিশেষ করে বোলিং ও ব্যাটিং ইউনিটের মধ্যে দুর্দান্ত সমন্বয় আছে। কোচিং স্টাফও দারুণ কাজ করছে, এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে আপনার মনে কী ভাবনা কাজ করছে?
নাহিদ: চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলব—এ রকম ভেবে অনেক রোমাঞ্চিত। এই ধরনের টুর্নামেন্টে খেলা প্রত্যেক ক্রিকেটারের স্বপ্ন। নিজের সেরা ফর্ম নিয়ে সেখানে যেতে চাই। আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার মতো সুযোগ পেলে সেটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে চাই। দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা সব সময় বড় অনুপ্রেরণা।
প্রশ্ন: সুযোগ পেলে এটা আপনার প্রথমবার আইসিসির কোনো ইভেন্টে খেলা হবে। সেখানে আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী থাকবে?
নাহিদ: চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আমার প্রথম আইসিসি ইভেন্ট হবে, যদি সুযোগ পাই। স্বাভাবিকভাবে অনেক স্বপ্ন দেখি। দেশের হয়ে প্রথমবার এমন একটি বড় মঞ্চে ভালো করার সুযোগ পেলে সেটা জীবনের সেরা মুহূর্ত হয়ে থাকবে। তবে এখন বিপিএল খেলছি, এটায় বেশি ফোকাস রাখার চেষ্টা করছি। এখানে ভালো করলে, ফিট থাকলে আশা করি সেখানেও ভালো কিছু সম্ভব।
প্রশ্ন: আপনার গতির সঙ্গে নতুন কোনো ভেরিয়েশন যোগ করার পরিকল্পনা আছে?
নাহিদ: গতি আমার মূল শক্তি। তবে এই যুগে শুধু গতি দিয়ে ব্যাটারদের চমকে দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু ভেরিয়েশন নিয়ে কাজ করছি। ইয়র্কার, স্লোয়ার এবং সুইং বোলিংকে আরও কার্যকরের চেষ্টা করছি। প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে চেষ্টার কোনো ঘাটতি রাখি না। তবে এসবের জন্য নিজেকে ফিট রাখাটা বেশি জরুরি। চেষ্টা করছি নিয়মমাফিক জিম ও ড্রিল করে গতি ঠিক রাখার কৌশলগুলো রপ্ত করার।
প্রশ্ন: এবারের বিপিএল কি আগের চেয়ে আলাদা মনে হচ্ছে?
নাহিদ: এবারের বিপিএল অনেকটাই ব্যাটিং সহায়ক। উইকেট ফ্ল্যাট, রান তুলতে ব্যাটাররা সুবিধা পাচ্ছে। তবে এটা বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জিংও। আসলে যেখানে চ্যালেঞ্জ নাই, সেখানে খেলে মজাও নাই। চ্যালেঞ্জ জয়ের মজাই অন্য রকম। বোলার হিসেবে এই ধরনের পরিস্থিতিতে ভালো করতে পারলে নিজের স্কিলের উন্নতি হয়। এই চ্যালেঞ্জ উপভোগ করছি।
প্রশ্ন: হাই-স্কোরিং উইকেটে ভালো বোলিং করার চ্যালেঞ্জ কীভাবে নিচ্ছেন?
নাহিদ: উইকেট ফ্ল্যাট হলেও পরিকল্পনা ঠিক থাকলে ভালো বোলিং করা সম্ভব। সঠিক লাইন-লেন্থ ধরে রাখা, ভেরিয়েশন প্রয়োগ করা এবং ব্যাটারদের দুর্বল দিকগুলো টার্গেট করাই আমার কৌশল। প্রতিটি ম্যাচের আগে ভিডিও বিশ্লেষণ দেখি। আমার দলের অ্যানালিস্ট আমাদের এসব দেখান। জাতীয় দলের অ্যানালিস্টও আমাদের ভিডিও দেখান। কী ধরনের বল কার বিপক্ষে করতে হয়। নিজের স্কিলের উন্নতিতে কী ধরনের বোলিং প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, তা তাদের কাছ থেকে দারুণভাবে সহায়তা করে। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামি ম্যাচে। সেসব পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: জাতীয় দলের সিনিয়র সতীর্থ তাসকিন আহমেদ এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। তাঁকে টপকে যাওয়ার কোনো লক্ষ্য কি আছে?
নাহিদ: আসলে আমি রেকর্ডের পেছনে ছুটি না। আমি খেলি এবং চেষ্টা করি আমার কাজটুকু সঠিকভাবে করতে। যদি আমার পরিকল্পনা ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ভালো কিছু হতে পারে। এটিই আমার সাফল্য। উইকেট পেতেই হবে, এমন কোনো মানসিকতা নিয়ে বোলিং করি না।