রানা আব্বাস, দিল্লি থেকে
এটা অনুমিতই ছিল, অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আজকের ম্যাচের আগে দুই দলের সংবাদ সম্মেলনে অবধারিতভাবে বায়ুদূষণ প্রসঙ্গ আসবে। গতকাল তা এলও, একাধিকবার এল।
বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের উত্তর ছিল, ‘যেটা বললেন, বাতাসের মান দুই দলকেই আক্রান্ত করবে। এটা আদর্শ নয়। তবে আমাদের কিছু করার নেই। এই কন্ডিশনে খেলতে হবে।’
বায়ুদূষণ বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় দিল্লিতে এখন বিশ্বকাপ ম্যাচ আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। দিল্লির বায়ুদূষণে শ্রীলঙ্কার অতীত অভিজ্ঞতা আবার খুব একটা ভালো নয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে দিল্লি টেস্টে বমি করে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার কয়েকজন ক্রিকেটার। গত দুই দিনে গুঞ্জন ছড়ায় শ্রীলঙ্কা নাকি ম্যাচটা এখান থেকে সরিয়ে নিতে আইসিসিকে অনুরোধ করেছে। যদিও কাল সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কা দলের ম্যানেজার মাহিন্দা হালাঙ্গোদা পরিষ্কার করেছেন, তাঁরা এ ধরনের কোনো অনুরোধই করেননি। তবে তাঁরা আইসিসির কাছে জানতে চেয়েছিলেন দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে।
গতকালও যে পরিস্থিতি ছিল, তাতে আজকের ম্যাচ ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার কথা। তবে বাতাসের মান ভালো না থাকায় ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আইসিসিকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় শ্রীলঙ্কা ভালোভাবেই অনুশীলন সেরেছে। বাংলাদেশ অনুশীলন করেছে দুপুরে। দলের সাত ক্রিকেটার কাল অনুশীলনে আসেননি। মাঠে আসা বাকি আটজনের মধ্যে ছিলেন সাকিব আল হাসান। ছন্দে থাকলে তিনিও হয়তো বিশ্রামে থাকতেন। ম্যাচের আগের দিন সাকিব কমই অনুশীলন করেন। পরিস্থিতি এতটাই কঠিন হয়ে গেছে তাঁর, ছন্দে ফেরার নানা উপায় খুঁজতে হচ্ছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে। সাকিবের দলের পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়, অনেকটা দিল্লির দূষণের মতো। ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশে যেমন কিছুই পরিষ্কার দেখা যায় না, বাংলাদেশও তেমনি কিছুতেই জয়ের দেখা পাচ্ছে না!
টুর্নামেন্টে এখনো বাংলাদেশের ৩০০ রানের স্কোরই গড়া হয়নি, সর্বোচ্চ স্কোর ৮ উইকেটে ২৫৬ (ভারতের বিপক্ষে)। সেখানে শ্রীলঙ্কা নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই ৩০০ পেরোনো স্কোর গড়েছে। লঙ্কানদের দুর্ভাগ্য, বড় স্কোর গড়তে পারলেও ম্যাচ তারা জিততে পারেনি। তবে বড় রান করার অভ্যাস তো আছে। বাংলাদেশ এখানেই পিছিয়ে।
হাথুরু মনে করিয়ে দিলেন, গত কয়েক বছরে দুই দলের লড়াইটা যথেষ্ট হাড্ডাহাড্ডি হয়। ২০১৮ নিদাহাস ট্রফির পর দুই দলের লড়াইয়ে আবার ‘নাগিন নৃত্যের’ প্রসঙ্গও চলে আসে। টানা ছয় হারে বাংলাদেশ যেরকম বিপর্যস্ত-বিধ্বস্ত, শ্রীলঙ্কার মানসিক অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। যেহেতু দুই দল একই পরিস্থিতির মধ্যে আছে, বাংলাদেশ চাইছে, অন্তত লঙ্কানদের বিপক্ষে দারুণ কিছু করতে। তাতে শুধু হারানো আত্মবিশ্বাসই ফিরে পাওয়া যাবে না, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আশাটাও বেঁচে থাকবে। হাথুরু এখনো আশাবাদী, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ খেলবে।
বিশ্বকাপে নিজেদের বাকি দুটি ম্যাচ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি—বাংলাদেশের অনেক কিছুই এখন অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছে। প্রশ্ন উঠেছে হাথুরুর ভবিষ্যৎ নিয়েও। প্রশ্ন এত জমেছে, দিল্লির দূষণের চেয়ে বাংলাদেশকে বেশি ভাবতে হচ্ছে নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়েই।