নাজিম আল শমষের, ঢাকা
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের পাশেই ফেডারেশনের আর্টিফিশিয়াল টার্ফ মাঠ। স্থানীয় লোকজনের কাছে অবশ্য ‘বালুর মাঠ’ নামেই পরিচিত। দুপুরের শেষ দিকে সূর্যের তেজ কমতেই মাঠে হাজির হতে থাকে আশপাশসহ দূর-দূরান্তের ৩০-৪০ জন নানা বয়সী কিশোর ফুটবলার। এসব কিশোর ফুটবলারদের পরম যত্নে ফুটবল শেখান ছোটখাটো গড়নের মধ্যবয়সী এক কোচ।
রেফারির মতো হাতে বাঁশি নিয়ে তিনি চষে বেড়ান মাঠের এই প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। তাঁর নাম ইব্রাহিম খলিল। ফুটবল অঙ্গনে যিনি পরিচিত ‘কালা ভাই’ নামে। উঠতি ফুটবলারদের প্রিয় গুরু কালা ভাই। জাতীয় দলের মিডফিল্ডার সোহেল রানা, ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ জুয়েলের উঠে আসা তাঁর দেখানো পথ ধরেই। প্রিমিয়ার লিগের বিভিন্ন ক্লাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন কালা ভাইয়ের শিষ্যরা।
আর্টিফিশিয়াল টার্ফে ‘আরামবাগ ফুটবল একাডেমি’ নামের এই ফুটবলার তৈরির কারখানায় বর্তমানে কালা ভাইয়ের ছাত্রের সংখ্যা ৫০ ছুঁইছুঁই। নিজেও একটা সময় ফুটবল খেলেছেন। তবে শীর্ষ লিগে কখনো খেলা হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের দশকে টাঙ্গাইল জেলার হয়ে খেলেছেন পাইওনিয়ার লিগে। প্রয়াত তারকা ফুটবলার বাদল রায়ের এলাকা কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে ১৯৮৪ সালে খেলতে গিয়ে বড় চোট পেয়েছিলেন পায়ে। সেই চোট আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। খেলা ছেড়ে ফুটবলার তৈরির কাজ করছেন প্রায় তিন দশক ধরে। একাডেমি গড়েছেন ১১ বছর হলো। জড়িত আছেন মোহামেডানের সঙ্গেও।
ছাত্রদের মাঝে থাকলে কালা ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা বেশ কঠিন। এ ব্যস্ততার মধ্যে খানিকটা ফুরসত পেয়ে কথা বললেন। জানালেন, তাঁর একাডেমিতে সুযোগ পাওয়ার একটাই শর্ত, নিয়মিত আসা।
একাডেমির প্রতিভাবান ফুটবলারদের বয়সভিত্তিক দলগুলোতে খেলার সুযোগ করে দেন কালা ভাই। কেউ কেউ খেলেন প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বিভাগ ফুটবলে। প্রতিভার ঝলকে সোহেল রানা, জুয়েলদের মতো কেউ কেউ সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় দলেও।
আরামবাগ একাডেমির পাশাপাশি ক্লাবটির পাইওনিয়ার ও অনূর্ধ্ব-১৮ দলেরও দায়িত্বে আছেন কালা ভাই। স্পট ফিক্সিং ও অনলাইন বেটিংয়ে আগামী দুই মৌসুমের জন্য প্রথম বিভাগ ফুটবলে নেমে গেছে আরামবাগ। ক্লাবের এই অধঃপতনের শুরু ২০১৯ থেকে, ক্যাসিনো-কাণ্ডে। ক্লাবের এই দুরবস্থা থেকে কালা ভাইয়ের মনটা বিষণ্ন হয়ে যায়। বলেন, ‘আরামবাগ একটি মহল্লাভিত্তিক ক্লাব। মমিনুল হক সাঈদ (ক্যাসিনো-কাণ্ডে পলাতক আরামবাগের সাবেক সভাপতি) যখন চলে গেলেন, তখন সবাই মিলে যদি সিদ্ধান্ত হতো, আমরাই ক্লাব চালাব, তাহলে আজ এই অবস্থা হতো না। লিগের প্রথম লেগে যাদের হাতে ক্লাবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারাই সর্বনাশ করেছে!’
‘সর্বনাশা’ পরিস্থিতি থেকেই আশার ফুল ফোটাতে চান কালা ভাই। আর সে আশায় নতুন স্বপ্নে নতুন উদ্যমে প্রতিদিন ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি এক ঝাঁক কিশোর ফুটবলার নিয়ে।