Ajker Patrika

পানির সংকট, সমাধান কীভাবে?

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, ০৮: ৫৩
পানির সংকট, সমাধান কীভাবে?

খবরটি নিয়ে যতটা হইচই হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি। দুজন গরিব কৃষক সাঁওতাল পরিবারের সদস্য হওয়ায় তাঁদের মৃত্যু ওপর মহলে নাড়া দিতে পারেনি। সময়মতো জমিতে আবাদের জন্য

সেচের পানি না পেয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামে দুই সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও রবি মারান্ডি বিষপান করেন। দুজনেরই মৃত্যু হয়। খবরটি গণমাধ্যমে ছাপা হলেও এ নিয়ে তেমন শোরগোল হয়নি। ব্যাপারটি যেন এমন, দুজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন, এটা নিয়ে আলাপ-বিলাপ করার কী আছে? প্রতিদিনই তো কত কারণে কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে, নৌপথেও মৃত্যু ওত পেতে আছে, বিনা চিকিৎসায় কিংবা ভুল চিকিৎসায়ও মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যুই তো স্বাভাবিক, বেঁচে থাকাটাই যেন বিস্ময়ের।

তবে এই ঘটনায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার না করায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, ঈশ্বরীপুর-২ গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন বোরো মৌসুমে কৃষকদের সঠিক সময়ে পানি দেন না। নলকূপ থেকে গ্রামে খাওয়ার পানি সরবরাহেরও ব্যবস্থা আছে। সাখাওয়াত এই পানিও ঠিকমতো সরবরাহ করেন না। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে এসব জানা গেছে।

এলাকার কৃষকেরা বলছেন, এলাকাভেদে বোরো ধানের জমিতে সেচের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৭ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত। গভীর নলকূপের অপারেটররাও বলছেন, আগের মতো আর পানি উঠছে না গভীর নলকূপে।

২৫ মার্চ দুপুরে গোদাগাড়ীর পালপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি গভীর নলকূপের পাশে বোরো ধানের গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। এর পাশেই অনাবাদি পড়ে আছে কিছু জমি। একজন নলকূপ অপারেটর জানিয়েছেন, অনাবাদি জমির পরিমাণ ৫০ বিঘা। নলকূপে পানি কম ওঠায় ওই জমিগুলো চাষের আওতায় আনা যায়নি। পাশের একটি গভীর নলকূপে ১৫ দিন লাইন দিয়েও মানুষ পানি পাচ্ছে না।

পানিসংকটের কারণে কয়েক দশক আগেও বরেন্দ্র অঞ্চলে তেমন ফসল হতো না। এই সমস্যার সমাধানে জন্ম নেয় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ১৯৮৫-৮৬ সাল থেকে বিএমডিএ বরেন্দ্রজুড়ে গভীর নলকূপ বসাতে শুরু করে। তারপর ভূগর্ভস্থ পানি তুলে চাষাবাদ শুরু হওয়ায় সবুজে ভরে ওঠে বরেন্দ্র অঞ্চল। কিন্তু সেই সম্ভাবনা এখন নতুন বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে।

পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। উত্তরবঙ্গে এবার খরা চলছে, স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। ভূগর্ভস্থের পানির ব্যবহার বেড়েছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে শুধু সেচকাজ ব্যাহত হবে না, খাওয়ার পানিরও ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে।

পানি নিয়ে হাহাকার দূর করার কোনো পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের মাথায় আছে তো?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত