বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে স্বামী মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাথী আক্তার নামের এক তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক। তাঁর অভিযোগ, জেলে থেকেও মোশারফ নিজের হিজড়া বাহিনী দিয়ে সাথীকে হত্যা ও লাশ গুম করার হুমকি দিচ্ছেন। এতে সাথী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বীরগঞ্জ প্রেসক্লাবে আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে সাথী আক্তার ও একদল হিজড়া এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাথী আক্তার বলেন, ‘মরিচা ইউনিয়নের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের ছেলে গোলাপগঞ্জ হাট ইজারাদার মোশারফ হোসেনের ইসলামি শরিয়তমতে ২০১৮ সালে আমার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে যৌতুকলোভী ও সম্পদগ্রাসী স্বামী মোশারফ আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এর পর থেকে আমি মাহাতাবপুর মৌজায় নিজ বাড়িতেই বসবাস করি এবং গুরুমায়ের পরামর্শে এলাকায় অন্যান্য হিজড়ার সঙ্গে থাকি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বীরগঞ্জের প্রবীণ হিজড়া পারুলসহ অন্য হিজড়ারা বলেন, বিয়ের পর থেকে মোশারফ সাথী আক্তারকে অত্যাচার-নির্যাতন করতে থাকেন। এতে সাথী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল দিনাজপুরে মামলা করেন। বর্তমানে মোশারফ হাজতে বন্দী রয়েছেন।
জানা গেছে, স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হওয়ায় উভয়ের মধ্যে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। এর আগে সাথী আক্তার আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েও আটক হন। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
সাথী আক্তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, ‘ইজারাদার মোশারফ হোসেন হাজতে বন্দী থাকলেও বাইরে তাঁর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেমে নেই। তাঁর নির্দেশে ব্রাহ্মণভিটার দেলোয়ার ওরফে রেখা হিজড়া, চিরিরবন্দরের শাহিনুর হিজড়া ওরফে ফরসা সাথী এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রুবেল হিজড়ার নেতৃত্বে একদল অজ্ঞাতনামা বহিরাগত হিজড়া ১৯ জানুয়ারি দুপুরে ৩-৪টি মাইক্রোযোগে লাঠিসোঁটা, দা, বল্লম, সামুরাই নিয়ে গোলাপগঞ্জ এসে আমাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদসহ হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়।’
এরপর বাধ্য হয়ে সাথী আক্তার তাঁর ঢাকার গুরুমা দিপালী হিজড়াকে ফোন দিয়ে ঘটনাটি জানান। গুরুমা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের নেতা শিউলি হিজড়াকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিলে শিউলি হিজড়া তাৎক্ষণিক ৩০-৩২ জনের একটি দল নিয়ে সাথীকে রক্ষা করতে গোলাপগঞ্জ বাজারসংলগ্ন মহাদেবপুরে সাথীর বাড়িতে এসে হাজির হয় এবং এখন পর্যন্ত অবস্থান করছে।
বিশাল উপস্থিতি বুঝতে পেরে দেলোয়ার ওরফে রেখা হিজড়ার নেতৃত্বে মোশারফের হিজড়া বাহিনী মোবাইলে হুমকি-ধমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। সতর্ক অবস্থায় থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতি করতে পারেনি মোশারফের বাহিনী। তবে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অভিযুক্ত ইজারাদার মোশারফ হাজতে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আর তাঁর হিজড়া বাহিনীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাঁদের পাওয়া যায়নি।
এদিকে সাথীর ফোনে মোশারফের বাহিনীর হুমকি-ধমকি দেওয়ার বেশ কয়েকটি অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে সেগুলো শোনানোও হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, মোশারফ এলাকায় প্রভাবশালী ও মাস্তান প্রকৃতির। এমতাবস্থায় নিরীহ সাথী আক্তার ও তাঁর সঙ্গীরা আইন, প্রশাসনসহ সর্বস্তরের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। মোশারফের তীব্র সমালোচনা করে উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন হিজড়ারা।