দেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর মোংলায় ৭০টি দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি নিলামে তুলেছে মোংলা কাস্টম হাউস। মোংলা বন্দরের শেডে থাকা এসব গাড়ি আমদানিকারকেরা ছাড় না করায় গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) মোংলা কাস্টম হাউস এই গাড়ি নিলামে ওঠায়। ডিসেম্বর মাসে গাড়িগুলো বিক্রির জন্য মোংলা কাস্টম হাউসে হস্তান্তর করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৩ জুন জাপান থেকে মোংলা বন্দরে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। মোংলা বন্দরে আমদানির পর ইয়ার্ড এবং বিভিন্ন শেডে রাখা নির্ধারিত সময়সীমার বেশি অতিবাহিত হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য মোংলা কাস্টম হাউসে হস্তান্তর করে। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস বন্দরে পড়ে থাকা ৩০০টি গাড়ি গত ডিসেম্বরে মোংলা কাস্টম হাউসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে এলিয়ন, ফিল্ডার, হাইব্রিড, প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার, ভেসেল, হ্যারিয়ারসহ ৭০টি দামি ব্রান্ডের গাড়ি সোমবার নিলামে ওঠায় মোংলা কাস্টম হাউস।
এর আগে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বন্দরে আনা সাবেক সংসদ সদস্যের তিনটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িও নিলামে তোলা হয় গত ২০ নভেম্বর। তবে সেগুলোর এখনো বিক্রয় আদেশ হয়নি। এসব গাড়ি গত বছরের ১৭ জুলাই টাঙ্গাইল-৮ আসনের অনুপম শাহজাহান জয়, দিনাজপুর-১ আসনের মুহাম্মদ জাকারিয়া ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাসিমা জামান ববি মোংলা বন্দরে আমদানি করেন। তাঁরা এখন পলাতক রয়েছেন।
মোংলা কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মো. রুবেল হাসান বলেন, গাড়িগুলো নিলামে ক্রয় করতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলা কাস্টমস হাউসে দরপত্র জমা দেওয়া ছাড়াও অনলাইনে বিট করেছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী ২৯ জানুয়ারি দরপত্র খোলা হবে এবং যাচাই-বাছাই শেষে সর্বোচ্চ দরদাতাকে প্রাপ্ত গাড়ির বিক্রয় আদেশ জারি করা হবে।
তিনি আরও জানান, মোংলা কাস্টমের রাজস্ব আয়ের শতকরা ৫২ শতাংশ আসে আমদানি করা গাড়ির শুল্ক থেকে। তবে আমদানি করা গাড়ি দীর্ঘদিন বন্দরে পড়ে থাকলে অন্যান্য পণ্য রাখতে সমস্যা হয়। নিলাম প্রক্রিয়া চালু রাখলে গাড়ি বা অন্যান্য পণ্য রাখতে ব্যবসায়ীদের সুবিধার পাশাপাশি সঠিক সময়ে সরকারের রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, পদ্মা সেতুর কল্যাণে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই বন্দরে গাড়ি আমদানি বেড়েছে। তবে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে খালাসের পর দীর্ঘদিন ছাড় না করায় দ্রুত এসব গাড়ি কাস্টমসকে নিলামের মাধ্যমে বিক্রির তাগিদ দেন তাঁরা। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন গাড়ি পড়ে থাকায় বন্দরের শেডে জায়গার অপচয় শুধু নয়, পাশাপাশি এসব গাড়ি অকেজো বা বিকল হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বন্দরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমদানিকারকেরা সময়মতো গাড়িসহ অন্যান্য পণ্য ছাড় না করার কারণে তা নিলামযোগ্য হয়। পরে তা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার মোংলা বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ৩০০টি গাড়ির মধ্যে ৭০টি বিলাসবহুল গাড়িসহ অন্যান্য পণ্য নিলামে তোলা হয়েছে। বাকি ২৩০টি গাড়িও পর্যায়ক্রমে নিলামে ওঠানো হবে।
উল্লেখ্য, মোংলা কাস্টম হাউসের মাধ্যমে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৪টি নিলামে ২ হাজার ২০০টি গাড়ি তোলা হয়। এর মধ্যে মাত্র ২০০টি গাড়ি বিক্রি করতে পেরেছেন তাঁরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাড়ির নিলামে অংশ নেওয়া এক ব্যবসায়ী জানান, নিয়মানুযায়ী প্রথম দরপত্রের যদি কোনো পণ্যের দাম ৬০ শতাংশ না ওঠে তবে তা অনুমোদন হবে না। দ্বিতীয় নিলামে যদি প্রথম দরপত্রের চেয়ে বেশি দাম পাওয়া যায় তবে বিক্রির সুযোগ রয়েছে। এরপর তৃতীয়, চতুর্থ বা পর্যায়ক্রমে পরের দরপত্রে দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম মানা হয় না। কারণ, বিধান অনুযায়ী এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা মূল্য নির্ধারণ করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে নিলাম কমিটিকে। এই বিধান ব্যবহার করে তারা পণ্যের দাম কমায় না। তাই পণ্যগুলো বারবার নিলামে তুলেও ক্রেতা পাওয়া যায় না।