খুলনা প্রতিনিধি
টিসিবির পণ্য ক্রয়ের সিরিয়াল দেওয়াকে কেন্দ্র করে খুলনায় যুবদল নেতা মানিক খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এদিকে গত সাড়ে তিন মাসে নগরীতে নয়টি হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধপ্রবণতা বাড়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মহানগর বিএনপি। প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে দলটি।
খুলনা সদর থানার এসআই রাকিবুল ইসলাম বলেন, গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে পুরাতন রেলস্টেশনসংলগ্ন পানির ট্যাংকের সামনে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের সিরিয়াল চলছিল। যুবদল নেতা মানিক সেখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় পুরাতন রেলস্টেশন এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাওলাদারের সঙ্গে সিরিয়াল দেওয়াকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ধারালো চাকু দিয়ে মানিকের পেটে ও বুকে আঘাত করা হয়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় মানিককে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতিকালে মারা যান মানিক।
রাকিবুল আরও বলেন, মানিককে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অভিযুক্ত মেহেদীর বড় ভাই সাজ্জাত হাওলাদারকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয়রা। সাজ্জাত বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন। এদিকে এ ঘটনায় মেহেদীর বোন তুলিকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। মানিক হত্যায় পরিবারের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। পুলিশি হেফাজতে নেওয়া সাজ্জাদ ও তুলিকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা সদর থানার ওসি মুনীর উল গিয়াস বলেন, মানিক হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত মেহেদী হাওলাদার পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারে সম্ভাব্য স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বেড়েছে এটি যেমন ঠিক, তেমনি পুলিশি তৎপরতাও থেমে নেই। তবে মাদক বেচাকেনা-সংক্রান্ত বিরোধ এবং এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পুলিশ নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী পুলিশি ভূমিকায় ছাত্র-জনতার ক্ষুব্ধতার কারণে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুলিশ। এ জন্য হয়তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
এদিকে গত সাড়ে তিন মাসে খুলনায় ৯টি খুনের ঘটনাসহ শতাধিক অপরাধ সংঘটিত হয়। সন্ধ্যা হলেই শান্ত খুলনা পরিণত হয় আতঙ্কের নগরীতে। এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বেড়েছে এটি যেমন ঠিক, তেমনি পুলিশি তৎপরতাও থেমে নেই। তবে মাদক বেচাকেনা-সংক্রান্ত বিরোধ এবং এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধ ঘটছে।
অপরাধপ্রবণতা বাড়ায় বিএনপির উদ্বেগ
খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নগর বিএনপির আহ্বায়ক আইনজীবী এস এম শফিকুল আলম মনা ও সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গতকাল সোমবার রাতে সংগঠনের সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। হত্যাসহ সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের প্রতিবাদে আজ বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশ করবে দলটি। সভায় বক্তারা বলেন, গত তিন মাসে নগরীতে নয়টি খুনসহ অসংখ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু বরাবরই সন্ত্রাসীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে দ্বিতীয়বার ভাবছে না।