বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবানের রুমায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়েছে। আজ মঙ্গলবার উপজেলার বেথেল পাড়া কমিউনিটি সেন্টারে এ বৈঠক হয়। কেক কেটে ও সাংস্কৃতিক মাধ্যমে বৈঠকটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
এতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে সংগঠনের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার নেতৃত্বে ১৩ জন সদস্য অংশ নেন। অপরদিকে কেএনএফের রিপ্রেজেনটেটিভ ফর পিস ডায়ালগের সেন্ট্রাল কমিটি ও টিম লিডার লালজংময়, সাংগঠনিক সম্পাদক লালসাংলম, সংগঠনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা লালএংলিয়ানসহ আটজন সদস্য অংশ নেন।
উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এস এম মঞ্জুরুল হক, অতিরিক্ত পলিশ সুপার (এএসপি) আব্দুল করিমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সূত্রে জানা গেছে, এর আগে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক হয়। এরপর গত ৫ নভেম্বর প্রথম সরাসরি বৈঠক হয়। এর চার মাস পর আজ (মঙ্গলবার) সরাসরি দ্বিতীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
এ সময় কেএনএফের কারাবন্দী ২৩ সদস্যকে ৩ মাসের মধ্যে মুক্তি, বেসামরিক নাগরিকদের প্রত্যাবাসন, পুনর্বাসনে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা–শিক্ষা নিশ্চিত, শান্তি চুক্তি সম্পাদন না হওয়া পর্যন্ত ভারতের মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া ৫ শতাধিক বম জনগোষ্ঠীর মানুষকে সরকারিভাবে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ ৬ দফা দাবি আলোচনায় উপস্থাপন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেএনএফ সেন্ট্রাল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক লাল জং ময় আজকের পত্রিকাকে বলেন, শান্তি কমিটির সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকের আলোচনা সফল ও সন্তোষজনক হয়েছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সভাপতি ক্য শৈ হ্লা বলেন, কেএনএফের দাবি বাস্তবায়ন করে দ্রুত পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে কাজ চলছে।
এদিকে বৈঠকটিকে ঘিরে বেথেল পাড়ায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ-বিজিবিসহ মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য।
এর আগে ২০২৩ সালের জুন মাসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের বিপথগামী সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার নেতৃত্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। এরপর পর থেকে সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে শান্তি কমিটি। ফলে পাহাড়ে সশস্ত্র কর্মকাণ্ড ও আতঙ্ক কিছুটা কমে আসে।
সংঘাতে পাঁচজন সেনা সদস্যসহ কেএনএফের ১৬ জন নিহত হয়, আর অপহরণের শিকার হয় অন্তত ২৬ জন। ফলে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস ও জনজীবনে অস্থিরতা বিরাজ করে।
এ সময় কেএনএফের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের যোগসাজশ আছে দাবি করে যৌথ বাহিনী পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৬৮ জন ও কেএনএফের কয়েকজনকে আটক করে। তাদের থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।