হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
কাপ্তাই হ্রদে জেগে থাকা ছোট ছোট দ্বীপ মিলে গড়ে উঠেছে বন্দুকভাঙার মুবাছড়ি গ্রাম। এই গ্রামের একটি দ্বীপে শোভা পাচ্ছে রঙিন ড্রাগন ফল।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রাঙামাটি জেলায় ১৫ হেক্টর এবং সদরে ৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ হচ্ছে। প্রতিবছরই চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। বছরে এই এলাকা থেকে ৭৫ টন ড্রাগন উৎপাদন করা হচ্ছে। ড্রাগন রাঙামাটি বাজারে কেজিতে ৩০০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিন মুবাছড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিয়তি রঞ্জন চাকমার বাড়ির পাশে একটি দ্বীপে গাছে ঝুলছে ড্রাগন ফল। প্রতিটি গাছে ড্রাগন ফল ধরেছে।
এ বিষয়ে নিয়তি রঞ্জন চাকমা বলেন, `উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে আমি শখে ৬০টি ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কিংসুক চাকমার পরামর্শমতে চারাগুলো রোপণ করি। কৃষি অফিস থেকে সারও দেওয়া হয়। রোপণের এক বছরের মাথায় ফলন আসতে শুরু করে। এখন পরিপূর্ণভাবে ফলন পাচ্ছি। প্রথম বছর আমার আয় হয় প্রায় ১ লাখ টাকা।'
নিয়তি রঞ্জন চাকমা আরও বলেন, `বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি রঙিন ড্রাগন ফল। প্রতিটি গাছে ধরে আছে প্রায় ১০-১২ কেজি করে ড্রাগন ফল। এ বছরও ভালো আয় হবে। এ ফলের চাষ আরও বাড়ানোর কথা ভাবছি। তাই চারা তৈরি করছি। শুধু তাই নয়, আমার ড্রাগন ফল চাষ করা দেখে অনেকেই চারা নিচ্ছে।'
উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এলাকার মাটিগুলো ড্রাগন ফলের জন্য উপযোগী হওয়ায় বেশ লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
অন্যদিকে, বন্দুকভাঙায় অনেক দ্বীপ অনাবাদি পড়ে আছে। নিয়তি রঞ্জনের সফলতা দেখে অনেকে ড্রাগন ফল চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নিচ্ছেন চারা ও পরামর্শ।
ওই দ্বীপের দীপন চাকমা (৩৫) নামে এক চাষি বলেন, `মনে হচ্ছে আমার জায়গায়ও ড্রাগনের চাষ হবে। সে জন্য নিয়তি রঞ্জনের কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করছি। আপাতত ২০টি চারা নিয়েছি। পরবর্তীতে আরও নেব।'
দীপন চাকমা আরও বলেন, ড্রাগন চাষ করতে এরই মধ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন চাষিরা। বন্দুকভাঙার মাটি ড্রাগন ফল চাষে বেশ উপযোগী বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মুকুল কান্তি দেওয়ান বলেন, `বন্দুকভাঙায় ড্রাগনের প্রচুর সম্ভাবনা দেখছি। এ ফলের সঙ্গে অন্যান্য ফল ও সবজি চাষ করা যায়। যে কেউ লাভবান হবেন।'
বন্দুকভাঙা এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কিংসুক চাকমা বলেন, `নিয়তি রঞ্জনের সফলতা দেখে অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাঁরা। আমি তাঁদের পরামর্শ দিচ্ছি।'
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহীদের চিহ্নিত করে তাঁদের চারা ও সার দেওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এলাকাটি যেহেতু ড্রাগন ফলের জন্য উপযোগী, তাই আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তা করব। এলাকায় কোনো দ্বীপ যেন অনাবাদি না থাকে, সে জন্যও আমরা কাজ করে যাব।