যশোর প্রতিনিধি
১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল যশোর শহরের আরবপুর এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন আবদুর ওহাব আলী। নিহত সহযোদ্ধা অনেকের নাম শহীদের তালিকায় থাকলেও স্বাধীনতার ৫২ বছরেও তাঁর স্বীকৃতি মেলেনি। আবদুর ওহাবের শহীদ স্বীকৃতির জন্য পরিবারের সদস্যরা অনেক দিন ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন।
আবদুর ওহাব যশোর শহরের ঘোপ জেলরোড এলাকার মফিজ উদ্দীন ঢালীর ছেলে। তাঁকে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সর্বশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তাঁর ভাই সাহেব আলী।
সাহেব আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে আমার ভাই আবদুর ওহাব ৮ নম্বর সেক্টরের ইপিআর সদস্যদের সহযোগী হিসেবে প্রতিরোধযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল যশোর শহরের কারবালা-আরবপুর এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। এই যুদ্ধে ভাইসহ আরও কয়েকজন সহযোদ্ধা নিহত হন। তাঁর সহযোদ্ধা নিহত জামাল সরদার, আতিয়ার রহমানের নাম শহীদ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ভাইয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও গেজেটভুক্ত না হওয়ায় হতাশ আমরা।’
আবদুর ওহাব শহীদ হওয়ার কারণে তাঁর পরিবার তৎকালীন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত দুই হাজার টাকার একটি চেক পায় বলে দাবি করেন সাহেব আলী। তিনি বলেন, ‘এরপর আর কোনো সহায়তা পায়নি আমার পরিবার। ভাইয়ের শহীদ স্বীকৃতির দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছি। আর্থিক সুবিধার দরকার নেই। ভাই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, এর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই। ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি।’
এদিকে আব্দুর ওহাবকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে তাঁকে গেজেটভুক্ত করার জন্য প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর যশোর জেলা বিএলএফের (মুজিব বাহিনী) প্রধান আলী হোসেন মনি ও যশোর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ প্রমুখ। প্রত্যয়নপত্রে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, প্রতিরোধযুদ্ধে আবদুর ওহাব নিহত হন। তাঁর সহযোদ্ধারা শহীদের স্বীকৃতি পেলেও তিনি পাননি।
বৃহত্তর যশোরের বিএলএফের কমান্ডার আলী হোসেন মনি বলেন, ‘আব্দুল ওহাব প্রকৃত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে শহরের কারবালা-আরবপুর নামক স্থানে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। সেই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ইপিআর বাহিনীও অংশ নেয়। ওই সময় ওহাবের সঙ্গে বেশ কয়েকজন শহীদ হন।’