যশোর প্রতিনিধি
যশোরে সাম্প্রতিক টানা ভারী বৃষ্টিতে সবজির খেত ও বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক দফায় সবজির চারা রোপণ করা হলেও বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে তা পচে যাচ্ছে। তাই বারবার সবজির চারা রোপণ করতে গিয়ে দ্বিগুণ খরচ করতে হচ্ছে কৃষকদের।
অপর দিকে শীতকালীন এসব সবজির বাজারে উঠতেও দেরি হবে। এতে সবজির জন্য বিখ্যাত জেলাটির কৃষকেরা লোকসানের পাশাপাশি শীতকালীন সবজি চাষের মৌসুম থেকে পিছিয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, দেশের চাহিদার সিংহভাগ সবজি সরবরাহ করেন যশোরের কৃষকেরা। এই জেলা সবজি উৎপাদনের জোন হিসেবে পরিচিত।সবজি চাষের অন্যতম প্রধান উপকরণ চারা উৎপাদনেও সুনাম রয়েছে যশোর জেলার। সদর উপজেলার আবদুলপুর গ্রামের চাষিরা বীজতলা নিবিড় পরিচর্যা আর বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজির চারার চাষ করছেন। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় উন্নত মানের সবজির চারা উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি; যার বাজারমূল্য ২৫ কোটি টাকার বেশি। এখানকার উৎপাদিত সবজির চারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর এই কাজ করে বিঘাপ্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করছেন কৃষকেরা।
যশোর-চৌগাছা সড়কের আব্দুলপুর গ্রামের রাস্তার দুই পাশে তাকালেই দেখা যাবে শত শত পলিথিনে ঢাকা রয়েছে সবজির বীজতলা। প্রতিবছর আষাঢ় মাস থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় বীজতলা প্রস্তুত করে বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ বপন করেন এ গ্রামের কয়েক শ কৃষক।
এরপর ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে এক মাস বয়সে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন তাঁরা। বর্তমানে বাজারে ভালো মানের প্রতি হাজার ফুলকপির চারা ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৫০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ভালো দামে চারা বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরা। তবে গত জুলাই থেকে ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতে তাঁরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
নজরুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ‘গত মাসে বাঁধাকপি, বেগুন আর ফুলকপির চারা কিনেছিলাম। কিন্তু ওই সময় বৃষ্টিপাতের কারণে রোপণ করা চারা মারা গেছে। নতুন করে লাগানোর জন্য আবার চারা কিনতে এসেছি। ফলে সবজি উৎপাদনে যে খরচ হতো, এবার দ্বিগুণ হচ্ছে।’
আলামিন হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, ‘এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে চারার নার্সারির অনেক ক্ষতি হয়েছে। একই মাসে ৭-৮ বার বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে নার্সারি। সেসব কৃষক আমাদের কাছ থেকে চারা কিনে তাঁদের জমিতে রোপণ করেছিলেন, তাঁরা ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন।’
রিপন হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, ‘বৃষ্টি এবার শীতকালীন সবজি চাষ ওলটপালট করে দিয়েছে। এখন জমিতে সবজির চারা রোপণ করার সময়। সেই সময়ে এখন বীজতলা তৈরি করছি। ফলে এবার শীতকালীন সবজি বাজারে আসবে দেরিতে।’
কৃষক জাকির হোসেন বলেন, বারবার রোপণ করা চারা জমিতে নষ্ট হওয়াতে সবজি উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে; যার প্রভাবও পড়েছে সবজির বাজারে। বাজারে সবজির যে মূল্যবৃদ্ধি, এটা শিগগির কমবে না বলে জানান তিনি।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. আবু তালহা বলেন, গত জুলাই থেকে ধারাবাহিক বৃষ্টির কারণে সবজিচাষিরা কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তবে কৃষি বিভাগ তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বিভিন্ন বীজ ও সার প্রণোদনা দিয়েছে।