হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

কালের সাক্ষী সোমপুর বিহার

মো. সৈকত সোবহান, বদলগাছী (নওগাঁ) 

শেষ বিকেলে সূর্যের আলো আড়াআড়িভাবে এসে পড়ে একেকটি ইটে। চারপাশে ছড়িয়ে যায় লালাভ উজ্জ্বলতা। সেই জ্যোতিতে মাটিচাপা পড়া এক সভ্যতা তার উপস্থিতি জানান দেয়। গা ঘেঁষে উঠতে উঠতে কল্পনায় চলে আসে এককালের কর্মচঞ্চল এক প্রাঙ্গণের প্রতিচ্ছবি। কালের গহ্বরে হারিয়ে যেতে যেতে ফিরে আসা এক সভ্যতার সঙ্গে আলিঙ্গন হয়।

প্রায় ১২০০ বছর আগের তৈরি সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুর বিহার ক্ষণিকের জন্য নিয়ে যাবে সুদূর অতীতে। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত এ বিহারটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম বৌদ্ধবিহার। বাংলাদেশে অবস্থিত তিনটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইটের মধ্যে এটি একটি।

মাটির ঢিবির নিচে দীর্ঘকাল চাপা পড়ে থাকা এই প্রকাণ্ড স্থাপনা দূর থেকে দেখলে পাহাড়ের মতোই মনে হবে। প্রাচীন বঙ্গ জনপদে সুদীর্ঘ চার শতক রাজত্ব করেছিল পাল বংশ। এ বংশের রাজারা ছিলেন নিষ্ঠাবান বৌদ্ধ। ধারণা করা হয়, পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপালের সময়ই নির্মিত হয় সোমপুর বৌদ্ধবিহার। আবার অনেকের ধারণা, ধর্মপাল নন তাঁর পুত্র রাজা দেবপাল ছিলেন এর নির্মাতা। কারণ হিসেবে বলা হয়, বিখ্যাত তিব্বতীয় ইতিহাসগ্রন্থ ‘পাগ সাম জোন ঝাং’–এর লেখক অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ধর্মপালের পুত্র দেবপাল (৮১০-৮৫০) কর্তৃক সোমপুরে নির্মিত বিশাল বিহার ও সুউচ্চ মন্দিরের উল্লেখ করেছেন।

একসময় তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্ম সাধকদের জ্ঞানতীর্থ এই বিহার মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল সুদীর্ঘকাল। মোটামুটি ৬০০ বছর স্মৃতির অতলে হারিয়ে থাকার পর পুনরায় এর হদিস মেলে ইংরেজ আমলে ভূমি জরিপের সময় ১৮০৭-১৮১২ সালের মাঝামাঝি কোনো একসময়। তারপর স্যার আলেকজান্ডার ক্যানিংহাম ১৮৭৯ সালের দিকে এবং ব্রিটিশ ভারতের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯২০–এর দশকে আংশিক খননকাজ চালায়। অবশেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮০–এর দশকে খননকাজ পুরোদমে শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে ইউনেসকো একে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে বৌদ্ধবিহারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও দর্শনশীল করতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন এডিপির অর্থায়নে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারকাজ শুরু হয়।

হাজার বছর আগের মূল মন্দিরটি ঘাসে ঢেকে গেছে। কিন্তু এখনো চোখে পড়ে স্থাপত্যকীর্তি। বিহারে প্রবেশদ্বারের দক্ষিণ পাশের কক্ষে রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী ও বই। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য ১০টি ছাউনি। রয়েছে পুরোনো আদলে নির্মিত ১টি পুকুর। প্রধান ফটকসহ ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে ৩টি সেতু। মন্দিরের চূড়ায় ওঠার জন্য তৈরি করা হয়েছে কাঠের সিঁড়ি।

মূল মন্দিরের দেয়ালে টেরাকোটার কাজ দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকমের মূর্তির আদলে টেরাকোটাগুলো তৈরি করা হয়েছে। টেরাকোটার মাঝে আজও জীবন্ত হাজার বছর আগে শিল্পীর কল্পনায় বানানো মন্দিরটি ঘিরে রাখা অনেকগুলো কক্ষ। ধারণা করা হয়, দূর–দূরান্ত থেকে আসা তান্ত্রিক সাধক ও শিক্ষার্থী ভিক্ষুরা অবস্থান করতেন এ ঘরগুলোয়।

নওগাঁ শহর থেকে মাত্র এক ঘণ্টায় পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে যাওয়া যায়। শহর থেকে পাহাড়পুরের দূরত্ব মোটামুটি ২৮ কিলোমিটার। রাতে থাকতে চাইলে রয়েছে পাহাড়পুর প্রত্নতত্ত্ব রেস্ট হাউস। আগেই বুকিং করে রাখতে হবে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের পাশেই গড়ে উঠেছে প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর। স্থাপত্যশিল্পে অনন্য এবং আকারে সর্ববৃহৎ সোমপুর বিহারে গেলে ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরে যাওয়া যাবে অতীতের এক সভ্যতায়। মহাকালের কাছে নশ্বর মানুষ কত ক্ষুদ্র। এই ভাবনা ক্ষণে ক্ষণে তার উপস্থিতি জানান দেবে।

কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটিতে আওয়ামী লীগের কর্মী

বগুড়ায় ৬ জনকে কুপিয়ে জখম, অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে

থমথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত, বিজিবি–বিএসএফের পতাকা বৈঠক

পাবিপ্রবির নতুন ট্রেজারার শামীম আহসান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ

রুয়েটের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

বাঘায় বিএনপি নেতার বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

চাঁদাবাজি-দখলদারি বন্ধ না হলে যুদ্ধ চলবে: ডা. শফিকুর রহমান

বগুড়ায় পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি নওগাঁয় গ্রেপ্তার

জামায়াতের সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন শহীদ সাকিবের বাবা

সেকশন