কৃষিপ্রযুক্তি মেলায় মাটির পাত্রে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন জাতের আম। গতবার ১০৫ জাতের আম মেলায় ঠাঁই পেয়েছিল। তবে এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫টিতে।
রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঘা উপজেলায় তিন দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার চত্বরে এ মেলার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে এই মেলায় ১৫টি স্টল দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য কৃষিপণ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি একটি স্টলে বাঘায় উৎপাদিত ১৪৫ জাতের আম প্রদর্শন করা হয়।
উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে এসব আম সংগ্রহ করে দর্শনার্থীদের পরিচিতির জন্য প্রদর্শনী স্টল স্থাপন করা হয়েছে। এত জাতের আম দেখতে স্টলটিতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। দর্শনার্থীরা বলছেন, এত জাতের আম আগে কখন দেখেননি তাঁরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, বাঘা উপজেলা হবে কৃষকদের জন্য মডেল। কৃষি খাতে যারা ভালো করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। আর দেশের মধ্যে অন্যতম কৃষিনির্ভর বাঘা উপজেলা। কৃষি খাতে এই উপজেলায় বিপ্লব ঘটেছে। কৃষি যাদের সার্বক্ষণিক পেশা ছিল না, তাঁরা এখন কৃষিতে আসছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে কয়েক বছর ধরে বাঘার আম বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পেঁপে, বরই, পেয়ারা পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এতে লাভবান হওয়ায় কৃষি খাতে কৃষকদের আগ্রহ অনেকাংশে বেড়েছে। আগামী মৌসুমে মিষ্টি আলু, ওল কচু ও হলুদ বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মেলায় বাঘায় উৎপাদিত ১৪৫ জাতের আম প্রদর্শন করা হয়। এগুলো হলো লক্ষণভোগ, দুধ কোমর, খালসি ফজলি, আপেল গুটি, হাইব্রিড লকনা, ক্ষীরশাপাত, ভাদরী, মধুখালসি, হিমসাগর, সুমাসী, পেঁপে ল্যাংড়া, জগৎমহনী, কাকড়ি, আড়াজাম, হাতিঝোল, দুধসাগর, আম্রপালি, আনারসী, মধু চুষকা, মল্লিকা, জাওনী, কালীভোগ আশ্বিনা, পাগাড়ে ও মধুমতী।
মকসেদ গুটি, ছাতুভিজালী, খোদা দাদা, নন্দাফ্রাম, কালীভোগ, জাইতুন, কুয়াপাহাড়ী, গোল্লা বেলী, বারি আম-১১, বাতাসী, সেনরী, গৌড়মতি, ধমীয়া, ভুজাহারী, কাটিমন (বারমাসী), সেঁদুরি, চাপাতি, গোপালভোগ, মোহন ঠাকুর, মধু রাণী, বেলী, মিছরিছানা, কইতর গুটি, দুধস্বর, সালাম ভোগ, জিলাপী কাড়া, কুমড়া জালি, শ্যামলতা, গোল কাচামিঠা, দারোগা ভোগ, গোপাল খাস, মালদহ, লেট আনারসী, রং বিলাস, বিন্দাবন গুটি, রহিমুন, দিলসা, মিসরিকান্ত, মুলতানি, চন্দনভোগ, কাজী পছন্দ, মোহনবাসী, কালী ভোগ, সুরসী গুটি, মিছরি দমদম, ঝুমকা গুটি, বেকে বৈশাখী, বাজে কলস, রাশিদা সুন্দরী, খাগড়াই, বাদল, সুরুজ আটি, ঠাকুরের ভিটা, রঘুনাথা গুটি, সিলেটি গুটি, সবেদা, সিঙ্গাপুরী ল্যাংড়া, আতা খালসী, আবুল গুটি, শাওনী আটি, রূপ সুন্দরী, চন্দনসুরী, আদরী, পেতা ও মধুমতী গুটি।
মেলায় ঘুরতে আসা উপজেলার পীরগাছা গ্রামের কলেজশিক্ষক নবাব আলী বলেন, ‘বাঘা আমের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এত জাতের আম একসঙ্গে কখনো দেখি নাই।’
কলেজ পড়ুয়া আমিনা খাতুন বলেন, ‘১৪৫ জাতের আমের উদ্বোধনের কথা শুনে দেখতে এসেছি। কাছ থেকে এত আম দেখে খুব ভালো লাগল।’
বাঘা শাহদৌলা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবদুল হানিফ মিঞা বলেন, কৃষিপ্রযুক্তি মেলাটা অসাধারণ।
উপজেলা সফল কৃষক শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, তিনি কয়েক বছর ধরে বিদেশে আম পাঠাচ্ছেন। আম রপ্তানির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে একদিকে কৃষক লাভবান হবে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
মেলা উদ্বোধনের আগে আলোচনা সভা শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি উপজেলা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সামসুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশাদুজ্জামান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান, বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোয়েব খান প্রমুখ।