রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফটকে রিকশায় যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট। কিলো তিনেক এ পথের ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষার সময় এ পথে একবার যেতেই সময় লাগছে অন্তত দেড় ঘণ্টা। একবার গন্তব্যে যেতেই ছয়গুণ বেশি সময় লাগার কারণে ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে তিন থেকে চারগুণ বেশি। অনেকে আবার এর চেয়েও বেশি ভাড়া নিচ্ছেন।
আজ সোমবার সকাল থেকে রাবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ দিন চার শিফটে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হয়। এই ইউনিটটিতে ১ হাজার ৫৯৪টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৫ হাজার ৮৫০ জন। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়েছেন আবার ফিরেছেন। তাই শহরজুড়েই দেখা দেয় যানজট।
এরপর তালাইমারী মোড় থেকে গাড়ির চাকা যেন নড়েই না। তালাইমারী-অক্ট্রোয় মোড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফটক পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার রাস্তা পেরোতেই আরও ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগছে। সাহেববাজার কিংবা রেলগেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে অন্তত দেড় ঘণ্টা লাগছে অতিরিক্ত রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের চাপের কারণে।
অসহনীয় এই যানজটের কারণে প্রচুর রিকশা-অটোরিকশা ঢুকে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের রাস্তায়। নগরীর ভদ্রা মোড় হয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পেছন দিক দিয়ে রাবির কৃষি অনুষদের সামনে দিয়ে চারুকলার দিকে গাড়িগুলো চলাচল করছে। কৃষি অনুষদ থেকে স্টেশন বাজার হয়েও গাড়ি চলাচল করছে। এই রাস্তাতেও যানজট দেখা গেছে।
রিকশাচালক মো. মারুফ জানান, সোমবার সকালে তিনি সাহেববাজার থেকে একবার রাবি ক্যাম্পাসে যান। সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। স্বাভাবিক সময়ে এই রাস্তায় সময় লাগে ১৫ মিনিট। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকার কারণে ভাড়া বৃদ্ধি করতে হয়েছে। ৪০ টাকার ভাড়া এখন তিনি নিচ্ছেন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। সময় বেশি লাগছে বলে ভাড়াও বেশি।
জামালপুর থেকে আসা ভর্তি পরীক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম জানান, প্রথমবারের মতো তিনি রাজশাহী এসেছেন। রাজশাহী শহরের কিছুই চেনেন না। সাহেববাজার থেকে ক্যাম্পাসে যেতে রিকশায় তার কাছে নেওয়া হয়েছে ১৮০ টাকা। প্রথমে ভেবেছিলেন অনেক দূরের পথ। কিন্তু পরে দেখেন দূরত্ব বেশি না। তবে রাস্তায় তীব্র যানজটের কারণে সময় লেগেছে বেশি। সময়মতো পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছানোর তাগিদে তিনি বেশি টাকাতেই এসেছেন বলে জানান।
বেশি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অটোরিকশা চালক মো. কালু বলেন, ‘আমরা ৫০০ টাকা জমায় গাড়ি চালাই। গাড়ি চলুক বা না চলুক মহাজনকে এই টাকা দিতেই হবে। এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকছি যানজটের কারণে। ভাড়া মারতে পারছি না। এখন ভাড়া বেশি না নিলে মহাজনকেও দিতে পারব না, নিজেরও কিছু থাকবে না। বাধ্য হয়েই বেশি নিচ্ছি।’
সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। তারপরও যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। হঠাৎ করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়েও কাউকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সিটি করপোরেশন এই শহরের রিকশা-অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশন কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানালেন সিটি করপোরেশনের রিকশা-অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি সরিফুল ইসলাম বাবু।
রাজশাহী ইজিবাইক চালক সমিতির সভাপতি মো. রাশেদ বলেন, ‘আমরা একতাবদ্ধ না। চালকদের একক কোনো সংগঠনও গড়ে ওঠেনি। কেউ কারও কথা শোনে না। ফলে যে যার মতো ভাড়া আদায় করে। আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘যারা পরীক্ষা দিতে আসছে তারা অতিথি। যানজটের জন্য একটু ক্ষতি হলেও দু-একদিনের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া ঠিক না। যারা বেশি নেয়, তাদের গাড়ি জব্দ করা উচিত। ট্রাফিক পুলিশই এ ব্যবস্থা নিতে পারে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার অনির্বাণ চাকমাকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা চলবে। তিন হাজার ৯৩০টি আসনের বিপরীতে এবার পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা দেবেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৭৪ জন পরীক্ষার্থী। তাদের অনেকের সঙ্গে অভিভাবকও রাজশাহী এসেছেন। বাড়তি মানুষের যাতায়াতের চাপে রাজশাহীতে দেখা দিয়েছে যানজট। প্রতিবছর পরীক্ষা চলাকালীন সময়টিতেই শহরে এমন যানজট থাকে। ভাড়া নিয়েও থাকে নৈরাজ্য।