জুয়েল আহমদ, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কয়েক দফা বন্যায় সড়কপথে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। বিধ্বস্ত সড়কে যান চলাচল অব্যাহত রাখতে সংস্কারকাজ করছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এসব কাজে অর্থ জোগাচ্ছেন প্রবাসীরা।
সরেজমিন জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত ১৮ জুন জগন্নাথপুর উপজেলায় প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। পরে ১ জুলাই নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয়বার বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। প্রায় এক মাস ধরে পানি নিচে থাকা গ্রামীণ সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বেশ কয়েকটি সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন এলাকাবাসী। এ ছাড়া তিন মাস ধরে কেশবপুর-এরালিয়া ভায়া রসুলগঞ্জ সড়কে এবং গত ২০ আগস্ট থেকে জগন্নাথপুর-শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়কে ভাঙন হওয়ায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) আওতাধীন উপজেলার জগন্নাথপুর-শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়কে ৬ কিলোমিটার, কলকলিয়া-তেলিকোনা-চণ্ডীডর সড়কে ৫ কিলোমিটার, চিলাউড়া-হলিদপুর সড়কে ৫ কিলোমিটার, কেশবপুর-এরালিয়া ভায়া রসুলগঞ্জ সড়কে ১০ কিলোমিটার, শিবগঞ্জ-রানীগঞ্জ সড়কে ২ কিলোমিটার ও মজিদপুর-এরালিয়া সড়কের ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গর্ত ও খানাখন্দ রয়েছে। সর্বমোট উপজেলায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসব সড়ক সচল রাখতে স্থানীয়দের উদ্যোগে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ও প্রবাসীদের অর্থায়নে সামাজিক সংগঠনগুলো এসব দায়িত্ব পালন করছে।
ঘোষগাঁও জাগ্রত যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক মীর রমজান আলী ছানা বলেন, জগন্নাথপুর-বেগমপুর সড়কের ঘোষগাঁও এলাকায় বন্যার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার কাজ করানো হয়েছে। বর্তমানেও কাজ চলছে।
কাতিয়া গ্রামের সুহেল মিয়া বলেন, জগন্নাথপুর-বেগমপুর সড়কের ভাঙা বাড়ি এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে সরাসরি যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রবাসীসহ স্থানীয়দের নিয়ে অচিরেই সংস্কার কাজের মাধ্যমে সড়কটি সচল করা হবে।
ইসমাইলচক গ্রামের তারেক আহমদ মিঠু বলেন, রানীগঞ্জ-স্বজনশ্রী সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশে প্রবাসীদের অর্থায়নে সংস্কার কাজ করা হয়েছে। ফলে এখন যানবাহন চলাচল করছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা নাগরিক ফোরামের সদস্য আলী আহমদ বলেন, ২০২২ সালের স্মরণকালের বন্যার পর থেকে গত দুই বছরে উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কোনো সড়কে কাজ করা হয়নি। ফলে বর্তমানে উপজেলার সবকটি সড়কের বেহাল দশা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলাবাসী। স্থানীয়দের উদ্যোগে সংস্কারকাজ না হলে যানচলাচল বন্ধ থাকত। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোতে দ্রুত কাজ শুরু করা জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুই দফা বন্যায় এবং ২০ আগস্ট কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ৯০০ কিলোমিটার সড়কপথের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার অংশ ধরা হয়েছে। ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ টি। যার আনুমানিক ক্ষতি ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে সেই তালিকা জেলায় পাঠানো হয়েছে। তবে এর মধ্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ও কালভার্টের কাজ দ্রুতই শুরু করা হবে।