নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের ঘটনার সত্যতা আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন সিকৃবির প্রক্টর মনিরুল ইসলাম।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আজ বিকেলে সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে একটি মিটিংয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে অডিটোরিয়ামের সামনে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীরা। এ সময় কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ কারণে তাঁরা সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন এবং পরে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় উত্তেজিত নেতা–কর্মীরা আব্দুস সামাদ আজাদ হলে গিয়ে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী কয়েকজনের কক্ষ ভাঙচুর ও মারধর করেন। মারধরের সময় সেক্রেটারি অনুসারী একজন নেতার কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেন আব্দুস সামাদ আজাদ হলের পার্শ্ববর্তী শাহ পরান হলের প্রভোস্ট আল মামুন।
ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, সিকৃবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. এমাদুল হোসেন ও সহসভাপতি শরীফ হোসেনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শরীফের নেতৃত্বে সহসভাপতি সাব্বির মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসেনসহ ২০-২৫ জন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা সাধারণ সম্পাদক এমাদুলকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে প্রধান ফটক পর্যন্ত মিছিল করেন। এ সময় এমাদুলের সমর্থক অর্থনীতি বিভাগের আহসান হাবিব অসিম দেশীয় অস্ত্র (রামদা) নিয়ে বের হলে শরীফের সমর্থকেরা তাঁকে মারধর করেন। তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এসে রামদা উদ্ধার করে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে।
এ বিষয়ে সিকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হোসেনের বক্তব্যের জন্য তাঁকে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। আর সহসভাপতি শরীফ হোসেন দাবি করেন, তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন না। শরীফ হোসেন বলেন, ‘শুনেছি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এখন ক্যাম্পাসে যাচ্ছি।’
সিকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জুনিয়রদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ আমরা সমাধান করে দিয়েছি। আর কোনো ঝামেলা নাই।’
প্রক্টর মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আমরা এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একটি রামদা উদ্ধার করেছি। ৩-৪ জন সামান্য আহত হয়েছেন। আর হলের একটি রুমে দুটি জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’
ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা জানান, ২০২২ সালের ২৯ জুলাই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২০ জনের একটি কমিটি আসে। কিন্তু ১ বছর ৬ মাস পার হওয়ার পরও নেতা-কর্মীদের চাপ সত্ত্বেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে টালবাহানা করতে থাকে সাধারণ সম্পাদক। আজ না কাল আজ না কাল এভাবে দেড় বছর পার হয়ে গেলেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তাঁর সঙ্গে নেতৃবৃন্দ একাধিকবার বসেও হয়নি কোনো সমাধান। অনেক দিনের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে আজকে এই ঘটনা ঘটনা। আলোচনার একপর্যায়ে সেক্রেটারি উত্তেজিত হয়ে গেলে তিনি এক সাধারণ কর্মীর গায়ে হাত তোলায় পরিবেশ অস্থির হয়ে পড়ে। পরে সবাই মিছিল দিয়ে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। সেক্রেটারি ক্যাম্পাস ত্যাগ করে চলে যান।