হোম > অর্থনীতি

নারীর প্রতি সহিংসতার অর্ধেকই অর্থনৈতিক

অর্চি হক, ঢাকা

প্রতীকী ছবি

পাঁচ বছর অন্যের বাসায় কাজ করে কিছু টাকা জমিয়েছিলেন গৃহকর্মী রেহানা আক্তার। সেই টাকা পুরোটাই নিয়ে গেছেন তাঁর স্বামী। এখন টাকা চাইতে গেলে উল্টো তাঁর ওপর নেমে আসে শারীরিক নির্যাতন। রেহানা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শীত, গ্রীষ্ম দেহি নাই। পাঁচ বছর মানুষের বাসায় কাম কইরা দুই লাখ টাহা জমাইছিলাম, পুরাডাই উনি নিয়া উড়াইছে। আমার টাহা আমি চাইতে গেলে উল্টা আমারেই মারছে।’

শুধু রেহানা নন, দেশে তাঁর মতো অসংখ্য নারী প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চালু করা জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯-এ আসা ফোনকলের অর্ধেকই হলো অর্থনৈতিক সহিংসতা সম্পর্কিত। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই হেল্পলাইন পরিচালনা করে থাকে।

জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১০৯ হেল্পলাইনে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ ফোনকল আসে। এর মধ্যে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৮টি ছিল অর্থনৈতিক সহিংসতা সম্পর্কিত। বাকি কলগুলোর মধ্যে ৬১ হাজার ৫৯৫টি শারীরিক হেনস্তা সম্পর্কিত, ২১টি অপহরণের ঘটনায় সাহায্য চেয়ে কল, ৮৯৮টি যৌন হেনস্তা সম্পর্কিত, ৮৬৫টি বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত, ৬টি অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় সাহায্য চেয়ে কল, ৩৮ হাজার ৫৪৭টি মানসিক নির্যাতন সম্পর্কিত, চারটি পাচার সম্পর্কিত, পাঁচটি অ্যাসিড দগ্ধের ঘটনায় এবং ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪০১টি অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কিত। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি কল আসে অর্থনৈতিক সহিংসতার শিকার নারীদের। দিনে গড়ে এ সম্পর্কিত কল এসেছে ১ হাজার ২৬১টি।

তিন-চার বছর ধরে স্বামী আলাদা থাকেন সামিনা আকতারের। তাঁদের পাঁচ বছরের একটি কন্যাশিশু আছে। আলাদা থাকলেও স্ত্রী-সন্তানকে ভরণপোষণ দেন না সামিনার স্বামী। সামিনা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই বছর মেয়েরে স্কুলে ভর্তি করতে কানের দুল বিক্রি করছি। কয়েক সপ্তাহ ধইরা ওর বাবার কাছে চাওয়ার পরও সে কিছু তো দেয়ই নাই, উল্টা হেনস্তা করছে। ভরণপোষণ চেয়ে মানুষ মামলা করতে বলে। কিন্তু সেই মামলা টানবে কে? ঘরে আমার অসুস্থ মা। মেয়ে পালবো, মাকে দেখবো, নাকি মামলার পিছনে দৌড়াবো?’

জাতীয় হেল্পলাইন সেন্টারের প্রোগ্রাম অফিসার রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থনৈতিক সহিংসতা বলতে একজন নারীর আর্থিক অধিকার খর্ব-সংক্রান্ত ঘটনাগুলোকে আমরা নিই। স্বামী স্ত্রী বা সন্তানের ভরণপোষণ দিচ্ছেন না, এমন অভিযোগও এই ক্যাটাগরিতে পড়ে। একটি কেসের ধরন অনুযায়ী ক্যাটাগরি করা হয়। যেমন একটি ঘটনা অর্থনৈতিক সহিংসতা, মানসিক টর্চার ও শারীরিক সহিংসতা তিন ক্যাটাগরিতেই পড়তে পারে। তবে ঘটনার তীব্রতা যে ক্যাটাগরিতে বেশি সেখানে ফেলা হয়।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নারীর প্রতি অর্থনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে। গত চার বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক সহিংসতা সম্পর্কিত কল সবচেয়ে বেশি এসেছে ২০২৪ সালে। ২০২১ সালে ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৯১টি, ২০২২ সালে ৩ লাখ ৬ হাজার ৬৬০টি, ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৭৭টি। আর গত বছর এই কলের সংখ্যা ৪ লাখ ৬০ হাজার অতিক্রম করে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি অর্থনৈতিক সহিংসতা হলো এমন এক সামাজিক সমস্যা, যা নারীর আর্থিক স্বাধীনতা এবং অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিদ্যমান। অর্থনৈতিক সহিংসতা কেবল নারীদের ব্যক্তিগত জীবনে নয়, বরং সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, পারিবারিক সহিংসতার বেশির ভাগই অর্থনৈতিক কারণে হয়ে থাকে।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, অর্থনৈতিক বা আর্থিক সহিংসতা না বলে আমি এটাকে বৈষম্য বা বঞ্চনা বলতে চাই। আমাদের দেশে নারীদের জন্য এত আইন থাকার পরও যে তাঁদের আর্থিকভাবে বা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, এর মানে হলো আইন থাকাটাই যথেষ্ট নয়। স্কুল-কলেজে মেয়েদের সম্মান করতে শেখানো দরকার। আমাদের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার।

১৫ বছরে শেয়ারবাজার সংকুচিত হয়েছে, অনেক পিছিয়েছে: ডিএসই চেয়ারম্যান

মূল্যস্ফীতিসহ পাঁচ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

বিশ্ববাজারে বেড়েছে ডিজেলের দাম, রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফল

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

মাস্টারিং কমপ্লায়েন্স: ইনসাইটস অ্যান্ড স্ট্যাটেজিস ফর সোর্সিং অ্যান্ড সেলস লিডার্স ইন রেস্পন্সিবল টেক্সটাইলস সেমিনার অনুষ্ঠিত

আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেডের নতুন ৩ পণ্য লঞ্চ

২২ হাজার টন চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ল মিয়ানমারের জাহাজ

পরবর্তী দুই অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.২ শতাংশ হারে

সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধি নামবে ৪.১ শতাংশে: বিশ্বব্যাংক

কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে ১৪ শতাংশ

সেকশন