মঞ্জুর আহমদ, সিলেট
সিলেটে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত এক বছরে সিলেট বিভাগে ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৭৮ জন। আর আহত হয়েছেন ৬৫৪ জন। এসব দুর্ঘটনার জন্য অযোগ্য চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, জনগণের অসচেতনতা ও অনিয়ন্ত্রিত গতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা বলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
নিসচার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম-সিলেট বিভাগীয় কমিটির সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মিশু বলেন, দেশের ১১টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন পত্রিকার তথ্য, অপ্রকাশিত ঘটনা ও নিসচার শাখা সংগঠনগুলোর রিপোর্টের ভিত্তিতে নিসচা সড়ক দুর্ঘটনার এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে সড়কে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব, টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রদত্ত ১১১টি সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ওভারটেকিং করা, বিরতি ছাড়া দীর্ঘসময় ধরে গাড়ি চালনা, সড়ক-মহাসড়কের মোটরসাইকেলও তিন চাকার গাড়ি বৃদ্ধি, রাস্তার পাশে হাটবাজার এবং দোকানপাট বসানোকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সদস্যসচিব আরও বলেন, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মোট ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৭৮ জন ও আহত হয়েছেন ৬৫৪ জন।
এসবের মধ্যে সিলেট জেলায় ১৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৯ জন নিহত ও ৩১৩ জন আহত হয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলায় ৪২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত ও ১৯৩ জন আহত হয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলায় ৪২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন। হবিগঞ্জ জেলায় ৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৮ জন নিহত ও ১০২ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে জেলা পর্যায়ে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অতিরিক্ত লোকসংখ্যা, অপর্যাপ্ত রাস্তা, মোটরসাইকেল ও রিকশার আলাদা লেন না থাকা, পথচারীদের নিয়ম না মানার প্রবণতা, জেব্রাক্রসিং, ওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস ব্যবহার না করে যত্রতত্র পারাপার ও রাস্তা চলাচল এবং পারাপারের সময় মোবাইল ব্যবহার করাকে দায়ী করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বছর দেড়েক আগেও সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের স্থানে স্থানে ছিল খানাখন্দ। কিন্তু এখন রাস্তার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। সংস্কার করা হয়েছে মহাসড়কের বেহাল অংশ। কিন্তু এরপরও থামছে না দুর্ঘটনা।
সড়ক সংস্কারের পরও দুর্ঘটনা না কমার জন্য সাতটি কারণকে দায়ী করেছে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সওজ সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য যেসব কারণ দায়ী তার মধ্যে রয়েছে গতির প্রতিযোগিতা ও অবৈধ ওভারটেক, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য বোঝাই, অবৈধভাবে সিএনজি অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল, লিংক রোড থেকে অসচেতনভাবে মহাসড়কে গাড়ি ওঠা, রাস্তার পাশে বাজার ও মানুষের ভিড় এবং মহাসড়কের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল। এ ছাড়া দুর্ঘটনার জন্য চালকদের বিশ্রাম কম নেওয়া ও টানা গাড়ি চালানোও দায়ী।
উৎপল সামন্ত আরও বলেন, বেশিরভাগ পরিবহন চালকেরা বিশ্রামের সুযোগ পান না। তাঁরা দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বা তার চেয়েও বেশি সময় গাড়ি চালান। এতে অনেক সময় গাড়ি চালানো অবস্থায় ঝিমুনি চলে আসে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা রোধে চালকদের প্রশিক্ষণ ও পথচারী-যাত্রীদের সতর্কভাবে চলাচলের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।