ঢাকা: দেখতে দেখতে একটা বছর অতিক্রান্ত, আজও মেনে নিতে কষ্ট হয় ইরফান খান আর নেই। গত বছর ২৯শে এপ্রিল চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেন ভার্সেটাইল অভিনেতা ইরফান খান। অভিনয় করছেন-এই ব্যাপারটাই মনে হত না কখনও। নিজের দুইটা চোখের ওপর সে কী অদ্ভুত এক নিয়ন্ত্রণ! ইরফান খানের কাজ দেখে বুঝেছি- কমই বেশি, যত মাপা অভিনয় করা যায়, তত সুন্দর।
ইরফানের খানের স্ত্রী সুতপা আর তাঁদের বড় ছেলে বাবিলের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনেমা সমালোচক অনুপমা চোপড়া। চমৎকার সব প্রশ্ন আর তার চেয়েও চমৎকার উত্তর। ইরফানের সাথে স্মৃতি, বাবা হিসেবে ইরফান কেমন ছিলেন, স্বামী হিসেবে কেমন ছিলেন- সব উঠে এসেছে ইন্টারভিউতে। স্ত্রী, সন্তান দুইজনেই একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন- ইরফান ছিলেন আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড। সুতপা চমৎকার একটা লাইন বললেন- আমাদের বিয়ে ছিল না, আমাদের দুজনের একটা সংগঠন ছিল।
ইরফানের স্মৃতির পাশাপাশি খুব ছোট্ট করে নেপোটিজম, ফেমিনিজমের ব্যাপারেও আলাপ হল। এত সুন্দর করে বললেন সুতপা!
ডিয়ার ইরফান খান, আই মিস ইউ লাইক হেল! স্বামীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আগে একান্ত সাক্ষাত্কারে ইরফান খানের জীবনের নানান অজানা কথা জানিয়েছেন স্ত্রী সুতপা শিকদার।
নিজের যা পছন্দ নয়, কোনওভাবেই সে কাজ করতেন না ইরফান। তাই তো সচরাচার কোনও বলিউড পার্টিতে দেখা মিলত না ‘মকবুল’ তারকার। সুতপা শিকদার স্মৃতির সরণি বেয়ে জানান, একবার এক প্রথম সারির নায়িকার সামনে এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটিয়ে ছিলেন ইরফান।
ইরফানের এমন আচরণের জন্য অনেকেই হয়ত তাঁকে অহংকারি ভেবে ভুল করত জানান সুতপা, তবে ইরফান পত্নীর কথায়-‘কে কি বললো তার তোয়াক্কা করতেন না ইরফান। আমরা সকলেই জানি এই ইন্ডাস্ট্রিতে শো অফ কতটা জরুরি। পার্টি যে ফেক কিছু একটা, সেই কারণে ও পার্টিতে যেত না। খুব বেশি মেলামেশা করত না। কারণ ও মিথ্যা বলতে পারত না। ও কাউকে দেখে বলতে পারত না- উফ ফিল্মটা দুর্দান্ত হয়েছে, যদি না মন থেকে ও সেটা অনুভব করত বা বিশ্বাস করত’।
ইরফান স্ত্রী সুতপা বলেন, ‘আমার তো মনে হত ও নিজের ধর্ম নিজেই তৈরি করত। যদি কোনো কিছুই না হত, অথবা ওর ক্যানসার না হত, হয়তো ও শোবিজের দুনিয়া ত্যাগ করে, নিজের সন্ধানে কোনো কিছুর চেষ্টা করতো। হয়তো সে নিজের সন্ধান, এই দুনিয়া বা আরো অন্য কিছুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়তেন। ও এসবের মধ্যে ছিল এবং এসব নিয়ে চর্চা ও পড়াশোনা করত। কীভাবে ঠিক বোঝাবো? একধরণের দার্শনিক হয় না এই জগতে, ঠিক তেমন! এমন একটা সত্যি যেটাকে তিনি বিশ্বাস করতেন। ধর্ম মানে ওর কাছে আধ্যাত্মিক বিষয় ছিল। একটা সময় ও উপনিষদ, রামকৃষ্ণ পরমহংস, বিবেকানন্দ পড়েছে... কিন্তু ও ধার্মিক গোছের মানুষ ছিল না। অশ্ব, মহাবীর ও সব পড়েছে’। সুতপা বলেন, ইরফান কখনোই কোনও লিঙ্গবৈষম্য, ধর্মীয় ভেদাভেদে বিশ্বাসী ছিলেন না।
ইরফান-পুত্র বাবিল জানালেন মৃত্যুর আগে তাঁকে কাছে টেনে ইরফান বলেছিলেন, তিনি আর বাঁচবেন না। মৃত্যুশয্যায় তাঁর বাবা’র বলা শেষ কিছু কথার মধ্যে যা অন্যতম ছিল বলেই জানিয়েছেন বাবিল।