হোম > পরিবেশ

কুয়াশা কমলেও কয়েক দিন থাকবে কনকনে ঠান্ডা বাতাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঘন কুয়াশার কারণে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বেলা গড়িয়ে দুপুর হলেও সূর্যের দেখা মিলছে না। পাশাপাশি তীব্র ঠান্ডা বাতাসের কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন। সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে ফেরি, লঞ্চ, বাস ও বিমান চলাচল। বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই। শীতের তীব্রতায় চরম বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ। টান পড়ছে তাঁদের আয়-রোজগারে। 

দুদিন ধরে এমনটাই অবস্থা রাজধানীসহ সারা দেশে। তবে আজ ও কাল শনিবার থেকে কুয়াশা কিছুটা কাটবে। যদিও আগামী তিন দিন ঠান্ডা বাতাসের প্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। 

দেশে এ বছর কুয়াশা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আবহাওয়ার ধরন অনেকটা বদলে গেছে। এখন যে কুয়াশাটা আছে, সেটাকে বলা হয় ‘অ্যাডভেকশন ফগ’। শীতল ভূমির ওপর দিয়ে উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস যখন বয়ে যায়, তখন এমন কুয়াশা দেখা দেয়। দিল্লি, উত্তরাঞ্চল এবং বাংলাদেশে যেহেতু অসংখ্য নদী, এ কারণে এখানে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। তাই এসব এলাকায় এবার কুয়াশা বেশি হচ্ছে। এই কুয়াশা কাটার উপায় হচ্ছে, পশ্চিমা লঘুচাপ অথবা বাতাসের বেগ বেশি থাকতে হবে।’ 

তবে এখনো তেমন শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপ তৈরি হয়নি জানিয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, ‘পশ্চিমা লঘুচাপ সাধারণত মাসে দু-তিনবার আসে। তবে এই মাসে এখনো এটা আসেনি। আগামী দু-তিন দিন কুয়াশা কিছুটা কাটবে। তবে একেবারে কাটবে না।’ 

বাতাসের প্রবাহ প্রসঙ্গে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘এখন মৃদু বাতাস বইলেও ভূমি যেহেতু ঠান্ডা, তাই এই বাতাসেই প্রচণ্ড ঠান্ডা লাগছে। বাতাসের এই প্রবাহ অব্যাহত থাকবে, কিছুটা বাড়তেও পারে।’ 

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় দেওয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম থাকার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। 

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, রাজধানীতে ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বইবে। আগামী দুই দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। তবে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় টেকনাফে, ২৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

এদিকে টানা শৈত্যপ্রবাহে ভেঙে পড়েছে চুয়াডাঙ্গাবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আমাদের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়ছে। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজও। চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন সাজ্জাৎ হাসান জানান, শীতের কারণে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। 

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কিরণ রায় (৩৫) নামের একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। 

কিরণ রায়ের পরিবার জানিয়েছে, গত বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শীতের মধ্যে তিনি খেতে ইরি ধান রোপণ করেন। 

কনকনে ঠান্ডা বাতাসে সাগরে জাল ফেলতে না পেরে বাগেরহাটের দুবলারচরে জীবনযাত্রা থমকে গেছে সহস্রাধিক জেলের। রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিম ফরাজি বলেন, ‘দুই দিন ধরে শীতের তীব্রতা বেশি। ঠান্ডা বাতাসে কয়েক হাজার জেলে চরের অস্থায়ী মাচাঘরে কোনোরকমে টিকে আছেন।’ 

ঘন কুয়াশায় আজ ৯ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। ফেরি বন্ধ থাকায় আটকা পড়ে দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাটের ম্যানেজার মো. কাউছার বলেন, ‘১০ দিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া নাব্যতা-সংকট ও ডুবোচরের কারণে ঠিকমতো ফেরি চলাচল করতে পারছে না।’ 

এদিকে আজ ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটেও। বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কুয়াশায় নদীপথে দৃষ্টিসীমা একেবারে কমে আসায় দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ 

আজ সৈয়দপুরে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস, যা চলতি শীত মৌসুমে নীলফামারী জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এতে চরম বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে না পেরে পরিবার নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সকাল ১০টায় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে রিকশাচালক আজাহার আলী বলেন, ‘ঠান্ডায় রিকশা চালানো খুব কষ্ট। এখন পর্যন্ত কোনো যাত্রী পাইনি।’ 

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হাকীম বলেন, ‘কুয়াশায় বিমানবন্দর রানওয়েতে সকাল নয়টায় দৃষ্টিসীমা ছিল ৩০০ মিটার। পরে দৃষ্টিসীমা বাড়তে থাকে।’ ফ্লাইট ওঠানামার জন্য ২ হাজার মিটার দৃষ্টিসীমার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

তাপমাত্রা কমতে পারে আজ, শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া দপ্তর

ঢাকার বাতাসে খানিকটা উন্নতি, দূষণের শীর্ষে করাচি

পরিবেশ ধ্বংসের মূলেবাজার অর্থনীতি

ঢাকার বাতাস আজ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, ভয়াবহ দূষণ করাচিতে

কুতুবদিয়া দ্বীপে নতুনভাবে বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে: পরিবেশ উপদেষ্টা

জলবায়ু পরিবর্তন: ২০৭০-৯০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপি কমবে ৫০ শতাংশ

ঢাকার বাতাস আজ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে তাসখন্দ

কামরাঙ্গীরচরে তিন পলিথিন কারখানা সিলগালা, জব্দ ১০০ টন

হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় নাগরিক সংলাপ

বায়ুদূষণ রোধে অভিযান: ২৪ লাখ টাকা জরিমানা

সেকশন