ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের তথ্য অনুযায়ী, দিল্লিতেই অবস্থান করছেন হাসিনা। তাঁকে লোধি গার্ডেনের লুটেনস বাংলো জোনে সুরক্ষিত এক বাড়িতে থাকতে দিয়েছে ভারত সরকার। ভারতে যাওয়ার পর শেখ হাসিনাকে এখনও সরাসরি ক্যামেরার সামনে আসতে দেখা যায়নি। তবে নানা সময়ে তাঁর অডিওফাঁস গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া একটি অডিও কল নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে আজ শনিবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হরতাল পালন করতে বলা হয়েছে। সেসঙ্গে প্রত্যেক এলাকায় মিছিল-মিটিংয়ের আয়োজনের কথা বলতে শোনা যায়। তবে শেখ হাসিনার পরিবার কিংবা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হরতালের বিষয়ে এখনও কিছু বলা হয়নি।
১৮ জানুয়ারি হরতালের সমর্থনে সিলেট মহানগরীতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের মশাল মিছিল ও পিকেটিং করেছে— এই দাবিতে দুটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুলভাবে প্রচারিত হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘আল্লাহ তুমি বাংলাদেশের রক্ষা কর সারাদেশে খেলা শুরু অবৈধ সরকার মানি না মানবোনা। হরতালের সমর্থনে সিলেটে আওয়ামী লীগের মশাল মিছিল ও পিকেটিং।’ ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু মানুষ রাস্তায় থাকা যানবাহনে আগুন দিচ্ছে এবং ভাঙচুর করছে। ‘১৮ ই জানুয়ারি হরতালের সমর্থনে সিলেট মহানগরীতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল বের করেন। তথ্য সংগ্রহ। সমকাল।’ ক্যাপশনে লেখা আরেকটি ভিডিওতেও কিছু মানুষকে মশাল মিছিল করতে দেখা যায়।
টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddik) নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। এই পোস্টে আজকে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২ হাজার ৩০০ রিয়েকশন পড়েছে এবং প্রায় ৮৫ হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটি সাড়ে ৬০০ বারের বেশি শেয়ার হয়েছে এবং ৪১২টি কমেন্ট পড়েছে। একই অ্যাকাউন্টে শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে অপর একটি ভিডিও ১২ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং এতে ১ হাজার ৪০০টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। পাশাপাশি ২ শত কমেন্ট করেছে। দুটি পোস্টেই কোনো কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওগুলো পুরোনো উল্লেখ করে কমেন্ট করতে দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট থেকে সত্য মনে করে কমেন্ট করেছে। হাবিবুল বাশার হাবিব (Habibul Bashar Habib) নামের অ্যাকাউন্ট লিখেছে, ‘সফল হোক। অবৈধ সরকার মানিনা মানবো না। জয় বাংলা।’ রিয়াদ হোসাইন (Riyad Hussain) লিখেছে, ‘ইনশাআল্লাহ জয় হবে একদিন। জয় বাংলা জয় হোক শেখ হাসিনা।’
প্রথম ভিডিওটি যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। ভিডিওর কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে প্রথম ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি পাওয়া যায়। এটি ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে বহুল প্রচারিত ভিডিওর রাস্তায় আগুনের দৃশ্য, আশপাশের পরিবেশের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ভিডিওর ডেসক্রিপশন অপশন থেকে জানা যায়, বিএনপির ডাকা অবরোধের সমর্থনে সিলেট শহরের সুবিদবাজার এলাকায় মশাল মিছিল হয়। সেই মশাল মিছিল থেকে যানবাহন ও আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
এসব সূত্র ধরে গুগলে সার্চ করলে, প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরের সুবিদবাজার এলাকায় অবরোধের সমর্থনে সিলেটে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিল করে। ওই সময় কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে সেসময় বিএনপির অংগসংগঠনের একজন নেতা জানান, তারা মশাল মিছিল শেষ করে চলে আসার পর ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
দ্বিতীয় ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে সমকালের ইউটিউব চ্যানেলে সেটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে বহুল প্রচারিত ভিডিওর রাস্তায় মানুষের স্লোগানের দৃশ্য, আশেপাশের পরিবেশের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ভিডিওর ডেসক্রিপশন অপশন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর হরতাল সমর্থনে সিলেটে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিল ও রাস্তায় পিকেটিং করেন।
গতকাল রাত বা আজ দিবাগত রাতে সিলেট শহরে আওয়ামী লীগ কর্তৃক মশাল মিছিল ও পিকেটিং হয়েছিল কিনা তা জানতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ থেকে সিলেট জেলা প্রতিনিধি ইয়াহিয়া মারুফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, গতকাল রাতে আওয়ামী লীগ কর্তৃক কোনো মশাল মিছিল ও পিকেটিংয়ের ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং, গতকাল শুক্রবার রাতে সিলেট শহরে আওয়ামী লীগ কর্তৃক মশাল মিছিল ও পিকেটিং করার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালের বিএনপির মশাল মিছিল ও পিকেটিংয়ের ভিডিও আওয়ামী লীগের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।