শীতকাল চলছে। শীতজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ঠেকাতে নানা পদক্ষেপের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা। আমাদের শরীরের ৬৫ শতাংশ পানি। শীতকালে ঘাম ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে পানি কম বের হয় বলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ঠান্ডা আবহাওয়ায় পিপাসাও কমে যায়। তাই শীতকালে পানিপানের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে শীতকালে শরীরে পানির প্রয়োজনীয়তা কমে যায়। এ ছাড়া শীতে আমাদের চা-কফিজাতীয় পানীয় পানের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে এবং শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়।
- মাথাব্যথা ও অবসাদ: পানি কম পান করলে জলীয় পদার্থের পরিমাণ কমে গিয়ে রক্ত গাঢ় হয় এবং রক্তচাপ কমে যায়। ফলে মস্তিষ্ক ও প্রান্তীয় কোষগুলোয় রক্ত চলাচল কমে গিয়ে মাথাব্যথা ও অবসাদ তৈরি হয়।
- কর্মোদ্যম হারিয়ে ফেলা: শরীরের প্রতিটি কোষের সুনিপুণ কাজের জন্য পানি অত্যাবশ্যক। পানির অভাবে কোষগুলো স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়।
- কিডনির সমস্যা: কম পানি পান করলে সেই কম পানি কিডনিকে বারবার ছেঁকে প্রয়োজনীয় উপাদান আহরণ করে বাকি বর্জ্য পদার্থ নিঃসরণ করতে হয়। এতে কিডনির ওপর চাপ পড়ে। অন্যদিকে ক্যালসিয়ামের লবণ ঠিকভাবে নিঃসরণ হতে না পারায় কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা
বাড়ে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য: সঠিক হজম ও মল নিষ্কাশনের জন্য পানির বিকল্প নেই। পানির অভাবে মল শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে।
- ক্ষুধা বেশি লাগা এবং ওজন বেড়ে যাওয়া: আমাদের মস্তিষ্ক ক্ষুধা ও পিপাসার অনুভূতি গুলিয়ে ফেলে। তাই অনেক সময় প্রচুর ক্ষুধা লাগে, যা আসলে পিপাসার অনুভূতি। পানি কম পান করে তাই বেশি খাওয়া হয়। সে জন্য ওজন বাড়ে।
- ত্বকের সমস্যা: শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় এমনিতেই ত্বক শুষ্ক ও খসখস হয়ে পড়ে। কম পানি পান করলে সেটা আরও প্রকট হয়ে দাঁড়ায়।
- শ্বাসক্রিয়ার সমস্যা: শীতকালে ঠান্ডা বাতাসে ক্রমাগত শ্বাস নেওয়া শ্বাসনালিকে শুষ্ক করে কাশি ও অস্বস্তির সৃষ্টি করে। পানি পানের অভাব সেটাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
কতটুকু পানি পান
যেকোনো ঋতুতে কতটুকু পানি পান করতে হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। পানি পানের পরিমাণ নির্ভর করে বয়স, উচ্চতা, ওজন, কাজের ধরনের ওপর। দৈনিক প্রস্রাবের পরিমাণ ও ধরন দেখে ধারণা করা সম্ভব কতটুকু পানি প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টায় দুই-তিনবার ঈষৎ হলুদাভ প্রস্রাব হওয়ার জন্য যতটুকু পানি লাগে, সেটাই দৈনিক পানির চাহিদা।
লেখক: রেসিডেন্ট, নেফ্রোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল