বর্ষায় ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ, টাইফয়েড, সাধারণ সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য মৌসুমি রোগে ভুগতে থাকে শিশুরা। হাসপাতালে ভর্তির হারও বেড়ে যায়। এর মধ্যে এবার ব্যাপকভাবে যুক্ত হয়েছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ও আতঙ্ক। তাই এ সময় মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে হবে।
ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ
সারা দিনের ব্যবহারযোগ্য পানির বিশুদ্ধতার জন্য বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। মনোযোগ দিলেই খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ানো ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগ, যেমন আমাশয়, হেপাটাইটিস এ, টাইফয়েড ইত্যাদি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- খাওয়ার পানি ভালো করে ফুটিয়ে খেতে হবে। পানি ফুটে ওঠার পর আরও ১০ থেকে ১৫ মিনিট নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে ফোটাতে হবে। ফিল্টার ব্যবহার করলে সেটা ঠিকমতো কাজ করছে কি না, ছাঁকনি এবং কিট ঠিক আছে কি না, সেগুলোও দেখতে হবে।
- ছয় মাসের নিচের শিশুরা যেহেতু শুধু বুকের দুধ খায়, সে ক্ষেত্রে শিশুর কাছে এসব জীবাণু যায় যাঁরা দেখাশোনা করছেন, তাঁদের কাছ থেকে। মা ও অন্যরা শিশুকে ধরার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নেবেন।
- নবজাতক থেকে শুরু করে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের গোসলের সময় খাওয়ার পানি ব্যবহার করতে হবে। কারণ, শিশুরা প্রায়ই গোসলের সময় পানি খেয়ে ফেলে।
- খাওয়ার আগে গ্লাস ও প্লেট খাওয়ার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
- শিশুরা বাইরের পানিজাতীয় কী খাবার খাচ্ছে, সে ব্যাপারে নজর দিতে হবে; বিশেষ করে স্কুলের শিশুদের প্রতি। রাস্তার পাশ থেকে ফুচকা, চটপটি, আখের রস কিংবা বিভিন্ন ধরনের শরবত কিনে খাওয়া যাবে না।
- পাতলা পায়খানা হলে খাওয়ার স্যালাইন (বয়স অনুযায়ী), ডাবের পানি, চিড়ার পানি, কাঁচকলায় তৈরি খাবারের সঙ্গে স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে। যদি শিশু নিস্তেজ হয়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে।
জ্বর
অতিরিক্ত জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়ানো যাবে এবং পুরো শরীর মুছে দিতে হবে। আইবুপ্রফেন কিংবা এসপিরিনজাতীয় ওষুধ নিজে দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। ভাইরাসজনিত জ্বরের মাত্রা অতিরিক্ত হতে পারে এবং তিন থেকে পাঁচ দিন থাকতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না।প্রতিবছরের মতো এ বছরও ডেঙ্গুর ভয়াবহতা শুরু হয়েছে এবং শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার বাড়ছে। এই জ্বরের ব্যাপারে যা খেয়াল রাখা জরুরি:
- দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মারাত্মক ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
- সাধারণত জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা মারাত্মক ডেঙ্গুর ক্রিটিক্যাল সময় চলতে থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে এই সময় প্রলম্বিত হয় এবং অনেক ডেঙ্গু রোগী জ্বর থাকা অবস্থায়ও ক্রিটিক্যাল অবস্থায় যেতে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাসকে ধ্বংস করার জন্য শরীরে যে প্রক্রিয়া চলে, তার প্রভাব হিসেবে রক্তে সাইটোকাইনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এসব জটিলতা তৈরি হয়। এ সময় রক্তের জলীয় অংশ রক্তনালি থেকে বের হয়ে যায়, ব্লাড প্রেশার কমে যায়, বুকে ও পেটে পানি জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। রক্তের অণুচক্রিকা কমে যাওয়া এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার কাজ ব্যাহত হওয়ায় রক্তক্ষরণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই এ সময় জ্বর এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- সতর্কতা হিসেবে বাসায় এবং এর আশপাশে তিন দিনের বেশি কোথাও পানি জমে আছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসি ও ফ্রিজের ট্রেতে পানি জমে আছে কি না, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
- রাতে ঘুমানোর সময় এবং দিনের বেলায়ও মশারি টানাতে হবে ঘুমানোর সময়। শিশুদের এ সময় সুতি কাপড়ের পায়জামা ও ফুলহাতা জামা পরানো ভালো।
ডা. নূরজাহান বেগম, স্পেশালিস্ট, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা