অনলাইন ডেস্ক
বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। নতুন শাসকগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) দেশটিকে নতুনভাবে গড়ার চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় তারা পুলিশ পুনর্গঠনে ইসলামি শিক্ষা ও আইনের দ্বারস্থ হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নতুন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ইসলামি শিক্ষা ও শরিয়া আইনের ওপর ভিত্তি করে নবগঠিত পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর উদ্দেশ্য নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা। কারণ, আগের পুলিশ বাহিনী বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বে দুর্নীতিগ্রস্ত ও দমনমূলক নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে পরিণত হয়েছিল।
সম্প্রতি রয়টার্স বেশ কয়েকজন নতুন পুলিশ সদস্য নিয়োগের আবেদন ফরমের অনুলিপি হাতে পেয়েছে। যেখান থেকে দেখা গেছে, ইদলিবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে দামেস্কে আসা ভর্তি–ইচ্ছুকদের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে প্রশ্ন করছেন কর্মকর্তারা এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণে ইসলামি শরিয়া আইনের ওপর জোর দিচ্ছেন।
দেশজুড়ে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং জনগণের আস্থা অর্জন করা সুন্নি মুসলিম ইসলামপন্থী গোষ্ঠী এইচটিএসের জন্য শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আইনশৃঙ্খলার কেন্দ্রে ধর্মকে স্থান দেওয়ার এই পদক্ষেপ একটি ধর্মীয় বৈচিত্র্যময় দেশে নতুন বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে, যা আগে থেকেই ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর জর্জরিত।
থিংক ট্যাংক সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যারন লুন্ড বলেন, ‘অনেক সিরিয়ানই এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন। কেবল সংখ্যালঘুরা নয়, খ্রিষ্টান, আলভী, দ্রুজ এমনকি দামেস্ক ও আলেপ্পোর মতো অঞ্চলের অনেক সুন্নি মুসলিমও এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারেন। কারণ, অনেকেই ধর্মীয় আইন নিয়ে আগ্রহী নন।’
পুলিশ প্রশিক্ষণে ধর্মীয় নৈতিকতা ও আইন পশ্চিমা সরকারগুলোকেও ভাবিয়ে তুলেছে। তাদের আশঙ্কা ইসলাম সিরিয়ার নতুন সংবিধানেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল-শাম ও অন্যান্যরা সংবিধান সংস্কারের পরিকল্পনা করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পশ্চিমা কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি ভালো লক্ষণ নয়। তবে এটি কতটা কঠোরভাবে বাস্তবায়িত হবে তার ওপরও নির্ভর করে।’
সিরিয়ার ডি-ফ্যাক্টো শাসক আহমেদ আল-শারা পশ্চিমা এবং মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলোকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন যে, তার দল আল-কায়েদার সঙ্গে পূর্বের সম্পর্ক ত্যাগ করেছে এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে মধ্যপন্থায় শাসন করবে। এরই মধ্যে গোষ্ঠীটি যুদ্ধের সময় তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ইসলামি আইনের কঠোর কিছু ধারা বাস্তবায়ন থেকে সরে আসার মাধ্যমে উদারতা দেখিয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণ জনগণের ওপর এটি চাপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য নেই, বরং নিয়োগপ্রাপ্তদের নৈতিক আচরণ শেখানোই তাদের লক্ষ্য। ইদলিবে পুলিশ একাডেমি স্থাপনকারী হামজা আবু আবদেল রহমান বলেন, ‘কোনটি অনুমোদিত আর কোনটি নয়, সে সম্পর্কে ধর্মীয় জ্ঞান থাকা নিয়োগপ্রাপ্তদের ন্যায়বিচারের সঙ্গে কাজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’