অনলাইন ডেস্ক
১৯৭৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সব নারী ক্রু নিয়ে প্রথম ফ্লাইট সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। তবে এই ঘটনা বেশ কয়েক বছর গোপন রাখা হয়েছিল এতে কেউ মারা যায়নি বলে!
ওই ফ্লাইটের পাইলট ছিলেন লিন রিপেলমেয়ার। তিনি বলেছেন, ‘ওই দিন ফ্লাইটের ফার্স্ট অফিসার অসুস্থতার কারণে উড্ডয়নের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তবে আমার ক্যাপ্টেন এমিলি উপস্থিত ছিলেন। ফলে যথাসময়ে ফ্লাইট উড্ডয়ন করতে ক্যাপ্টেনকে নিয়ে আকাশে উড়াল দিই।’
তবে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আনা হয়নি। শুধু তাই নয়, পাইলট রিপেনমায়ার ও ক্যাপ্টেন এমিলিকেও আর একসঙ্গে কোনো ফ্লাইটে রাখা হয়নি। কারণ জানতে চাইলে রিপেলমেয়ার বলেন, ‘এতে তো আর কেউ মারা যায়নি! এটা ফলাও করে বলা হবে কেন!’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যর বাসিন্দা লিন রিপেলমেয়ার। ছোটবেলা থেকেই আকাশে বিমান উড়তে দেখে আগ্রহ জাগে পাইলট হওয়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় এয়ার ইলিনয়ের ছোট্ট টুইন অটার কমিউটার এয়ারলাইনের প্রথম অফিসার হিসেবে যোগদানের মধ্যে দিয়ে। রিপেলমেয়ারের যোগ দেওয়ার আগে টুইন অটার এয়ারলাইনে একজন নারী ক্যাপ্টেন ছিলেন। তবে রিপেলমেয়ারকে নিয়োগ দেওয়ার পর মালিক তাঁকে বলেছিলেন, তাঁরা (দুই নারী) কখনো একসঙ্গে ফ্লাইট উড়াতে পারবেন না।
সে সময় রিপেলমেয়ার কারণ জানতে চাইলে মালিক বললেন, ‘আচ্ছা, কোনো ত্রুটি দেখা দিলে আমাদের সেখানে একজন পুরুষ মানুষ থাকতে হবে তো নাকি! আর আমরা যাত্রীদেরও ভয় দেখাতে চাই না, তাই না?’
সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে রিপেলমেয়ার আরও বলেন, ‘তিনি মালিক ছিলেন। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারতেন। সেই সময়ে এটির বিরুদ্ধে কোনো আইনও ছিল না, তাই আমরা কেবল সহ্য করে গিয়েছি।’
তবে এমন বৈষম্যমূলক পরিবেশেও দমে যাননি রিপেলমেয়ার। ১৯৭৫ সালে তিনি জানতে পারেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম দুই নারী এয়ারলাইন পাইলটকে নিয়োগ দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বনি টিবুর্জি এবং অপরজন ফ্রন্টিয়ারে এমিলি ওয়ার্নার।
রিপেলমেয়ার সিবোর্ড ওয়ার্ল্ড এয়ারলাইন্স নামক একটি কার্গো ক্যারিয়ারে একটি চাকরি করেছেন। বোয়িং-৭৪৭ এর প্রথম অফিসার হিসাবে জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্ট থেকে ট্রান্সআটলান্টিক রুটে উড়েছেন।
পাইলট হিসাবে তাঁর শেষ ফ্লাইট ছিল ২০১৩ সালে। ওই বছর তিনি ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং-৭৮৭ উড্ডয়ন করেন।
লিন রিপেলমেয়ার বলেন, ‘আমার প্রথম বোয়িং-৭৪৭ ও শেষ ৭৮৭ ফ্লাইট দুটি অবতরণ করেছে লন্ডনে। এটি একটি নিখুঁত ফ্লাইট ছিল। ক্রুরা চমৎকার ছিল। লন্ডনের আবহাওয়া ছিল সুন্দর। সবমিলিয়ে যাত্রা দুর্দান্ত ছিল। আমি তখন প্রধান পাইলটকে বলেছিলাম, অবসর নিতে চাই।’
তবে এখন রিপেলমেয়ার মনে করেন, বিমান চালনায় নারীদের ক্যারিয়ারের সুযোগ আগের চেয়ে অনেক বেশি সুগম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন যেসব মেয়েরা বিমানের পাইলট হতে চান তাঁদের সেই সুযোগ রয়েছে। এভিয়েশন স্কুল এবং এয়ারলাইন্সগুলো পুরুষদের মতোই নারীদের নিয়োগ দিচ্ছে। আমি এখন আর নারীদের প্রতি কোনো বৈষম্য দেখি না।’