হোম > ইসলাম

দাম্পত্য সম্পর্ক মধুর করার ১০ সুন্নত

মাওলানা ইসমাইল নাজিম

সব বিষয়ের মতো মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দাম্পত্যজীবনও মুমিনদের অনুপম আদর্শ। তিনি ছিলেন আদর্শ স্বামী। সাহাবিদেরও তিনি স্ত্রীকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসায় চাদরে মুড়িয়ে রাখার শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম, যে নিজের স্ত্রীর কাছে সর্বোত্তম। আর আমি স্ত্রীদের কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।’ (ইবনে মাজাহ ও তিরমিজি)

দাম্পত্য সম্পর্ক মধুর করে সংসার সুখের করতে মহানবী (সা.) বিভিন্ন রোমাঞ্চকর উপায় অবলম্বন করেছেন। মুমিনদের জীবনের পাথেয় জোগান দিতে তাঁর স্ত্রীরাই এসব উপায়ের কথা পরবর্তী সময়ে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন, যেন তারাও এসব উপায় নিজেদের দাম্পত্যজীবনে প্রয়োগ করতে পারে। এখানে নবীজির তেমনই কয়েকটি সুন্নতের কথা তুলে ধরা হলো—

ভালোবাসা প্রকাশ করা
স্ত্রীকে ভালোবাসাই একজন স্বামীর কর্তব্য নয়, বরং তা প্রকাশ করাও জরুরি। মহানবী (সা.) বিভিন্নভাবে স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ করতেন। প্রথম স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘আমার হৃদয়ে তাঁর ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া হয়েছে।’ (মুসলিম) 

অন্য হাদিসে এসেছে, আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন আমি নবী (সা.)-এর কাছে এসে জানতে চাইলাম, ‘মানুষের মধ্যে কে আপনার সবচেয়ে বেশি পছন্দের?’ তিনি বলেন, ‘আয়েশা’। আমি বললাম, ‘পুরুষদের মধ্যে?’ বললেন, ‘তার বাবা (আবু বকর)।’ (বুখারি) 
আরেক বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর সময় (প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য) সমানভাবে ভাগ করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি যেটুকু পারি (সময় ভাগ) করেছি, যেটুকু আমার হাতে নেই, বরং আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন (ভালোবাসা), তার জন্য আমাকে দায়ী করবেন না।’ (আবু দাউদ)

আয়েশা (রা.) আরও বলেন, ‘আমি পাত্রের যে অংশে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতাম, আল্লাহর রাসুলও (সা.) সেখানে মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আর আমার রেখে দেওয়া পানিও তিনি পান করেছেন, যখন আমি ঋতুমতী ছিলাম।’ (নাসায়ি) 

খাইয়ে দেওয়া
স্ত্রীকে খুশি করার জন্য তাঁর সমাদর করা চাই। হাসিমুখে তাঁর সামনে আসা চাই। স্ত্রীকে খাইয়ে দিলে সে খুশি হয়। এটি মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তুমি যা-ই করবে, তার সওয়াব পাবে। এমনকি তা যদি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া লুকমাও হয়।’ (বুখারি)

প্রতিযোগিতা করা
স্ত্রীর মন জয় করতে তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যায়। মহানবী (সা.) এমনটি করতেন। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবীজি আমার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন এবং আমি তাঁকে হারিয়ে দিয়েছি।’ (ইবনে মাজাহ) 

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। স্ত্রীর কাছে আসার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। শুরাইহ ইবনে হানি বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘নবীজি ঘরে প্রবেশের পর প্রথম কোন কাজটি করতেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘মিসওয়াক করতেন।’ (মুসলিম) 

স্ত্রীর কোলে মাথা রাখা
স্ত্রীর গায়ে হেলান দেওয়া, হাত রাখা, কোলে মাথা রাখা ইত্যাদি তাঁকে ভরসা দেয়। মহানবী (সা.) স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে কোরআন তিলাওয়াত করতেন। ঋতুমতী থাকলেও তিনি এ কাজ করতেন। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবীজি আমার কোলে মাথা রেখে কোরআন তিলাওয়াত করতেন অথচ আমি ঋতুমতী ছিলাম।’ (বুখারি)

স্ত্রীর মতামত নেওয়া
স্বামীর চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য ব্যক্তিগত কাজে স্ত্রীর মতামত নেওয়াও সুন্নত। মহানবী (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। 
শুধু ঘরোয়া বিষয়েই স্ত্রীদের মতামত নিতেন তা নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রেও তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। ইসলামের ইতিহাসে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে মহানবী (সা.) হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন। সেই মতামতের ফলও হয়েছিল অসাধারণ। (বুখারি)

স্ত্রীর পছন্দ বিবেচনা করা
স্ত্রীর সঙ্গে নিজের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো ভাগাভাগি করলে দাম্পত্য সম্পর্ক মজবুত হয়। স্ত্রীর পছন্দের বিষয়গুলো করতে অনুমতি দেওয়া, তাঁকে সুখী দেখতে চাওয়া নবীজির সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন আমি মসজিদে নববির আঙিনায় ইথিওপিয়ানদের খেলা দেখতাম, তখন নবীজি আমাকে তাঁর চাদরে আবৃত করে রাখতেন। আমি তৃপ্ত হওয়া পর্যন্ত (খেলা দেখতেই থাকতাম)।’ (বুখারি) 

স্ত্রীর প্রিয়জনকে সমাদর করা
স্ত্রীর বন্ধুবান্ধব ও প্রিয়জনদের সমাদর করা, তাঁদের খাতির-যত্ন ও আদর-আপ্যায়ন করা নবীজির সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘খাদিজাকে আমি দেখিনি। তারপরও আমি তাঁর প্রতি এত বেশি ঈর্ষা করেছি, যা নবীজির অন্য কোনো স্ত্রীর প্রতি করিনি। তারপরও নবীজি প্রায়ই তাঁর কথা বলতেন। যখনই তিনি বকরি জবাই করতেন, তা কেটেকুটে কিছু অংশ খাদিজার প্রিয়জনদের জন্য পাঠাতেন।’ (বুখারি) 

ঘরের কাজে সহায়তা করা
ঘরের কাজকর্মে স্ত্রীকে একা ছেড়ে না দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সংসার সুখের হয়। এটি স্ত্রীকে ভালোবাসার অনুভূতি দেয়। নবী (সা.) স্ত্রীকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করতেন। আসওয়াদ বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘নবী (সা.) যখন স্ত্রীদের সঙ্গে থাকতেন, তখন কী করতেন?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘তিনি তখন স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। আর নামাজের সময় হলে বেরিয়ে যেতেন।’ (বুখারি)

সুন্দর নামে ডাকা
স্ত্রীকে রূপ ও গুণের দিকে সম্বন্ধ করে বিভিন্ন প্রশংসাসূচক নামে ডাকলেও দাম্পত্য সম্পর্ক মধুর হয়। মহানবী (সা.) হজরত আয়েশাকে বিভিন্ন সুন্দর নামে সম্বোধন করতেন। যেমন তিনি বলতেন, ‘হে হুমাইরা’ অর্থাৎ ‘হে লাল আদুরে।’ (ইবনে মাজাহ) অনেক সময় আয়েশাকে তিনি ‘উআইশ’ তথা ‘আদুরে আয়েশা’ বলেও ডাকতেন।

এসব সুন্নত মহানবী (সা.)-এর জীবনের আলোকে বিশ্লেষণ করার কারণে পুরুষের করণীয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। অন্যথায় এসব স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। স্ত্রীরাও এসব উপায় অবলম্বন করে দাম্পত্যজীবন মধুর করতে সমান ভূমিকা রাখতে পারেন। 

লেখক: শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

ইমানি শক্তি বাড়ে যে ৩ আমলে

নামাজের ইমামতি করতে যে যোগ্যতা দরকার

কোরআনে ইসলাম প্রচারকের অপরিহার্য ৫ গুণ

জানাজা ও কাফনদাফনে অংশ নেওয়ার সওয়াব

হালাল-হারাম নিয়ে সংশয় থাকলে করণীয়

আসরের নামাজ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

কোরআন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই

মুসলিম ঐতিহ্যে টুপির গুরুত্ব

ব্যবসা-বাণিজ্যে নিষিদ্ধ ৮ কাজ

সেকশন