ওয়ায়েল বাহজাত আল-হাল্লাক ১৯৫৫ সালে ফিলিস্তিনের নাজারেথ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত হলেও জাতীয়তায় কানাডিয়ান তিনি। নাজারেথ স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে অধ্যয়ন সমাপ্ত করেছেন। ফিলিস্তিনের হাইফা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিকহ ও ইসলামিক আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করে তিনি ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে কানাডার মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে ইসলামি আইনের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক পদ লাভ করেন।
২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজ বিভাগে মানবিক ও ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১০ সাল থেকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগে অ্যাভালন ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক হন এবং ইন্দোনেশিয়া, টরন্টো ও সিঙ্গাপুরের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
ওয়ায়েল হাল্লাককে একজন অত্যন্ত জ্ঞানী লেখক ও গবেষক বিবেচনা করা হয়। তিনি ‘ইসলামি আইন ও এর সমসাময়িক প্রয়োগ’ গবেষণার জন্য অনেকের কাছে সমাদৃত। তবে তাঁর কিছু মতামত ও চিন্তার কারণে তিনি সমালোচিতও বটে। তাঁর কিছু লেখা ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ইসলামি স্কলারগণ আপত্তি তুলেছেন।
ওয়ায়েল হাল্লাক ইসলামি আইন অধ্যয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তাঁর রচনাসমূহ হিব্রু, ইন্দোনেশিয়ান, ইতালীয়, জাপানি, তুর্কিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ইসলামি আইনশাস্ত্রের উত্থান, এর উৎস, ইসলামি আইন প্রণয়নের ইতিহাস এবং ইসলামে বিচারব্যবস্থা, দর্শন, রাজনৈতিক তত্ত্ব ও যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে ৮০টির বেশি বিশেষ গবেষণা প্রকাশ করেছেন।
২০১৮ সালে ওয়ায়েল হাল্লাকের সাড়া জাগানো ‘রিস্টেটিং ওরিয়েন্টালিজম’ বইটি প্রকাশিত হয়। তিনি ইসলামি বিশ্বকোষ রচনা ও সম্পাদনায় অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, এনসাইক্লোপিডিয়া অব কোরআন, এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম, এনসাইক্লোপিডিয়া ইরানিকা, এনসাইক্লোপিডিয়া অব দ্য মডার্ন মিডল ইস্ট ও অন্যান্য।
২০০৯ সালে জন এস্পোসিটো ও তাঁর পর্যালোচনা প্যানেল ইসলামি আইনের ওপর গবেষণা ও রচনার জন্য হাল্লাককে বিশ্বের ৫০০ জন প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। যদিও হাল্লাক খ্রিষ্টান ছিলেন। ২০১৩ সালে তাঁর ‘দ্য ইমপসিবল স্টেট’ বইটি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বুক অ্যাওয়ার্ডে সেরা বই হিসেবে পুরস্কৃত হয়।
২০২০ সালে তাঁর রচিত ‘রিফর্মিং মডার্নিটি’ বইটি নটিলাস বুক অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়। ২০২১ সালে মানবিক ও সামাজিক জ্ঞানে তাঁর উদ্ভাবনী ও অগ্রণী ধারণা এবং থিসিসের তুর্কি একাডেমি অব সায়েন্সেস থেকে তোবা পুরস্কার পেয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে অধ্যাপক ওয়ায়েল হাল্লাক মুসলিম বিশ্বের নোবেলখ্যাত কিং ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে গবেষণার জন্য এ বছর তাঁকে এই পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।
লেখালেখির পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। বিডিএস আন্দোলনসহ পশ্চিমা জায়নবাদী দখলদারির বিরোধিতাকারী বেশ কয়েকটি আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাজে পরিস্থিতি দেখে তিনি বিরক্ত এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থার প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ও মুগ্ধতা রয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, একজন খ্রিষ্টান হিসেবে তিনি বর্তমান মডার্ন সিটিজেন হওয়ার চেয়ে একজন উমাইয়া সিটিজেন হওয়া অধিক পছন্দ করেন।