ইজাজুল হক
একসময় ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে ১৭৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মাআরিব শহরে বসবাস করত সাবা নামের এক জাতি। পবিত্র কোরআনে সাবা নামে যে সুরাটি রয়েছে, তা এই জাতির নামেই। সাবার রানি বিলকিসের কথা পবিত্র কোরআনে এসেছে।
সোলায়মান (আ.)-এর সময়ে ইয়েমেনের প্রভাবশালী শাসক ছিলেন তিনি। পরে সোলায়মান (আ.)-এর দাওয়াতে ইমান আনেন এবং তাঁর বশ্যতা মেনে নেন।
মাআরিব শহরটি ছিল দুই সারি পর্বতের মাঝখানে; উপত্যকায়। বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যেত। তাই সেখানে একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। একে সদ্দে মাআরিব বা মাআরিব বাঁধ বলা হতো। এর ফলে পানি জমে সেখানে কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয় এবং সেই পানি পরিকল্পিতভাবে সারা বছর সাবা জাতি ব্যবহার করতে থাকে। ফলে মাআরিব শহর ফল-ফসলে রঙিন হয়ে ওঠে। আল্লাহর অসীম নিয়ামত পেয়েও মাআরিববাসী আল্লাহর নাফরমানি করে। ফলে আল্লাহ সেই বাঁধ ধসিয়ে দেন।
ইবনে কাসির ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহের সূত্রে বলেন, তাদের ধর্মগ্রন্থে লেখা ছিল, বাঁধটি ইঁদুরের মাধ্যমে ধ্বংস হবে। ফলে তারা ইঁদুর নিধনের জন্য বিড়াল পুষতে লাগল। তবে আল্লাহর ইচ্ছাকে রোখার সাধ্য কার? সেই বাঁধে এতই ইঁদুর এল যে বিড়ালেরা হার মানল। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইঁদুরগুলো বেশ বড় বড় ছিল এবং বাঁধের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত মাটি নষ্ট করে ফেলেছিল। (ইবনে কাসির)
একসময় বাঁধটি ভেঙে পড়ল। অনেকে শহর ত্যাগ করে আগেই চলে গিয়েছিল। বাকিরা বন্যায় ভেসে গেল। শহরের দুই পাশের সুন্দর ফসলের খেত ও বাগান ধ্বংস হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা চমৎকারভাবে সেই দৃশ্যটি চিত্রিত করেছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘সাবা জাতির জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন। দুটি উদ্যান—একটি ডান দিকে, অন্যটি বাঁ দিকে। তোমরা তোমাদের রবের দেওয়া রিজিক খাও এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। স্বাস্থ্যকর শহর ও ক্ষমাশীল পালনকর্তা। এরপর তাঁরা অবাধ্য হলো। ফলে তাদের ওপর পাঠালাম সাইলুল আরিম তথা বাঁধভাঙা বন্যা। তাদের উদ্যান দুটিকে পাল্টে দিলাম এমনভাবে, যাতে উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউগাছ ও অল্প বরইগাছ। এটি কুফরের কারণে তাদের জন্য আমার শাস্তি। আমি অকৃতজ্ঞ ছাড়া কাউকে শাস্তি দিই না।’
(সুরা সাবা: ১৫-১৭)
১৯৮০ সালে ঐতিহাসিক মাআরিব বাঁধের কাছেই ৭৬৩ মিটার লম্বা ও ৩৮ মিটার উঁচু একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে দেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান। তাঁর পূর্বপুরুষেরা এই মাআরিবেরই বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৮৬ সালে বাঁধটি উদ্বোধন করা হয়। সাম্প্রতিক যুদ্ধে বাঁধটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।