আমিনুল ইসলাম মজুমদার
মক্তব প্রাথমিক ইসলাম শিক্ষার সূতিকাগার। আরবি মক্তব শব্দের অর্থ গ্রন্থাগার, পাঠশালা, অফিস। মুসলিম শিশুদের প্রাথমিক ইসলাম শিক্ষার মসজিদভিত্তিক পাঠশালাই মক্তব। কোমলমতি শিশুরা সেখানে কোরআন-হাদিস শেখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মাসয়ালা, দোয়া-দরুদ ও ইসলামি সংস্কৃতির প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করে।
ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর ধর্মশিক্ষার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মক্তবভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে মাদ্রাসায় অধ্যয়ন না করেও মুসলমানদের সন্তানেরা ধর্মীয় জ্ঞান ও নৈতিক শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের প্রায় সব শহর, গ্রাম, মহল্লার মসজিদে মক্তব শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল।
তবে পরিতাপের কথা হলো, চলতি শতকের শুরুর দিকে ধীরে ধীরে সমাজ থেকে মক্তব শিক্ষা হারিয়ে যেতে বসেছে। ভোরবেলায় শিশুদের মক্তবে যাওয়ার চিরাচরিত দৃশ্য এখন আর গ্রামবাংলায় খুব একটা চোখে পড়ে না। মসজিদের বারান্দাগুলো কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, হামদ-নাতের মিষ্টি-মধুর সুরে মুখর হয় না।
শোনা যায় না সম্মিলিত কণ্ঠে সকালে কোরআনের সুরলহরি। এই ভগ্নদশার প্রধান কারণ অভিভাবকদের উদাসীনতা। প্রচলিত প্রভাতি স্কুল, কিন্ডারগার্টেনও সমভাবে দায়ী। খুব ভোরে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর রীতি মক্তব শিক্ষায় সংকট সৃষ্টি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হলেও তা একজন মুসলিম শিশুর জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। জাগতিক শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষাকে মূলধারার বাইরে মনে করে অনেক অভিভাবক বাচ্চাদের মক্তববিমুখ করে তোলেন। ফলে এমন এক নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, যারা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুল-কলেজ থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ ছেলেমেয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে দেশ এবং জাতির মুখ উজ্জ্বল করছে; তবে তারা কতটুকু ইসলামি জ্ঞান ও নীতি-নৈতিকতা শিখছে, তাও ভাবার বিষয়। সত্যিকার অর্থে একটি আদর্শ জাতি গঠন করতে হলে মুসলিমপ্রধান এ দেশে মক্তব শিক্ষার প্রসার ঘটানোর বিকল্প নেই।
শিক্ষার্থী: ইসলামিক স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়