হোম > ইসলাম

কোরবানির পশু জবাই ও মাংস বণ্টন

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ

কোরবানির দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কোরবানি করা। কোরবানির জন্য ইসলাম সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস বণ্টনের ক্ষেত্রেও রয়েছে নির্দিষ্ট আদব। এসব বিষয় নিয়ে লিখেছেন মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ

কোরবানির সময় সম্পর্কে যা না জানলে নয়

  • কোরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি ইবাদত। নির্দিষ্ট সময়ের আগে অথবা পরে তা আদায় করার সুযোগ নেই। ফলে কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে এমন কেউ যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোরবানি না করে, পরবর্তী সময়ে তাকে একটি বকরির মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (হিদায়া)
  • কোরবানির পশু জবাই করার নির্ধারিত সময় হলো, ১০ জিলহজ ঈদুল আজহার নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। ঈদের নামাজের আগে পশু জবাই করা হলে কোরবানি আদায় হবে না। রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করবে, সে তার পরিবারের লোকের জন্য কেবল মাংসের ব্যবস্থা করবে; তা কোরবানি হিসেবে গৃহীত হবে না।’ (বুখারি)
  • নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই কোরবানি করা বৈধ হলেও সুন্নাহসম্মত নিয়ম হলো, নামাজ আদায়ের পর ঈদের দুই খুতবা শেষ হলে জন্তু জবাই করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ঈদুল আজহার দিন রাসুল (সা.) প্রথমে নামাজ পড়লেন, তারপর খুতবা দিলেন, তারপর জন্তু জবাই করলেন। (বুখারি)
  • যে শহরে একাধিক জায়গায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে কোনো এক জায়গায় নামাজ শেষ হলেই পুরো শহরে কোরবানি করা জায়েজ হবে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া)
  • উল্লিখিত সময়ের মধ্যে দিনে ও রাতে যেকোনো সময় কোরবানি করা যাবে, তবে ভালো আলোর ব্যবস্থা না থাকলে রাতে জবাই করা মাকরুহ। (ফাতাওয়া শামি)

পশু জবাইয়ের সময় যা খেয়াল রাখতে হবে

  • নিজের কোরবানির পশু নিজে জবাই করা উত্তম। অভ্যাস না থাকলে অন্য যেকোনো মুসলমানকে দিয়ে জবাই করানো যাবে। খুব ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করতে হবে, যাতে পশুর কষ্ট না হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পশু জবাইয়ের আগে ছুরি ভালোভাবে শাণ দিয়ে নাও।’ (মুসলিম)
  • জবাই করার সময় জবাইকারীর মুখ কিবলার দিকে থাকা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। কোনো কারণ ছাড়া অন্য দিকে মুখ করা মাকরুহে তাহরিমি। (ফাতাওয়া আলমগিরি)
  • জবাইয়ের আগে জবাইকারীকে অবশ্যই বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। একাধিক লোক ছুরিতে হাত রাখলে সবাইকে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না পড়লে ওই পশুর গোশত হালাল হবে না। (সুরা আনআম: ১২১; ফাতাওয়া শামি)
  • বিসমিল্লাহ ছাড়া অন্য যেসব দোয়া বিভিন্ন বইয়ে লেখা আছে, সেগুলো জানা থাকলে পড়বে। এটা মুশতাহাব। না পড়লে কোরবানি হবে না এমন ধারণা ভুল। (আগলাতুল আওয়াম)
  • জবাই মানে হচ্ছে, পশুর খাদ্যনালি, শ্বাসনালি এবং শ্বাসনালির পাশের দুটি রগ কেটে দেওয়া। জবাইয়ের পর পশু স্বাভাবিকভাবে নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। এ অবস্থায় পশুর শরীরের কোথাও দা-ছুরি লাগানো মাকরুহে তাহরিমি। (বাদায়িউস সানায়ি) 

কোরবানির মাংসবিষয়ক জরুরি পাঁচ মাসায়েল

  • জবাইকৃত হালাল জন্তুর আটটি অংশ খাওয়া নিষেধ: ১. পুরুষাঙ্গ, ২. স্ত্রী-অঙ্গ, ৩. মূত্রথলি, ৪. পিঠের হাড়ের ভেতরের মগজ বা সাদা রগ, ৫. চামড়ার নিচের টিউমারের মতো উঁচু করে থাকে এমন বর্ধিত মাংস, ৬. অণ্ডকোষ, ৭. পিত্ত ও প্রবাহিত রক্ত। (আল বাহরুর রায়েক)
  • কোরবানির মাংস কোরবানিদাতা, তার পরিবারের লোক, ধনী-গরিব সবাই খেতে পারবে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, মুসলিম-অমুসলিম যাকে যে পরিমাণ ইচ্ছা হাদিয়া দেওয়া যাবে। কাউকে না দিয়ে সব নিজের জন্য রেখে দেওয়াও জায়েজ আছে। (ফাতাওয়া আলমগিরি)
  • তবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা কোরবানির পশুর একটি অংশ দরিদ্র শ্রেণির জন্য বরাদ্দ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন, ‘সুতরাং তোমরা তা (কোরবানিকৃত পশু) থেকে খাও এবং দুস্থ-অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও।’ (সুরা হজ: ২৮) অন্যত্র বলেন, ‘তখন তোমরা তা থেকে খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্ত (যে নিজের অভাব প্রকাশ করে না) এবং ভিক্ষাকারী অভাবগ্রস্তকে খাওয়াও।’ (সুরা হজ: ৩৬)
  • কোরবানির পশুর কোনো অংশ বিক্রি করা বা কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া হারাম। কেউ এমনটি করে ফেললে তার মূল্য গরিব-মিসকিনদের দান করে দিতে হবে। (ফাতাওয়া আলমগিরি) 

ইমানি শক্তি বাড়ে যে ৩ আমলে

নামাজের ইমামতি করতে যে যোগ্যতা দরকার

কোরআনে ইসলাম প্রচারকের অপরিহার্য ৫ গুণ

জানাজা ও কাফনদাফনে অংশ নেওয়ার সওয়াব

হালাল-হারাম নিয়ে সংশয় থাকলে করণীয়

আসরের নামাজ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

কোরআন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই

মুসলিম ঐতিহ্যে টুপির গুরুত্ব

ব্যবসা-বাণিজ্যে নিষিদ্ধ ৮ কাজ

সেকশন