হোম > ইসলাম

লাক্ষাদ্বীপে ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ

ইজাজুল হক

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ভারতের লাক্ষাদ্বীপের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক হাজার বছরের পুরোনো। ইসলামের প্রথম যুগেই আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এখানে ইসলামের আগমন ঘটে। এখনো ইসলামই এই দ্বীপপুঞ্জের মানুষের প্রধান ধর্ম। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মসজিদ। তবে রাজধানী কাভারত্তি দ্বীপের উজরা মসজিদটি সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রাচীন। সমৃদ্ধ ইতিহাসের পাশাপাশি পর্যটকদেরও প্রিয় গন্তব্য এই মসজিদ। লিখেছেন ইজাজুল হক

লাক্ষাদ্বীপ ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত ৩৬টি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত কেন্দ্রশাসিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। নারকেলবাগান ও নীলাভ সৈকতের জন্য এটি পর্যটকদের প্রিয় স্থান। সাম্প্রতিক সময়ে এই দ্বীপপুঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। ভূরাজনৈতিক কারণে ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যে লাক্ষাদ্বীপ রয়েছে আলোচনার তুঙ্গে।

ইতিহাস লেখকদের মতে, ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লাক্ষাদ্বীপে ইসলামের আগমন ঘটে। শায়খ ওবায়দুল্লাহ নামের এক আরব ধর্মপ্রচারক এখানে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রাখেন। লাক্ষাদ্বীপের অন্তর্গত অন্যতম অ্যানড্রট দ্বীপের একটি মাজারকে তাঁর সমাধি বলে চিহ্নিত করা হয়। তখন থেকেই ইসলাম এখানকার প্রধান ধর্ম। দ্বীপপুঞ্জের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান এবং ইসলামের প্রতি গভীর অনুরাগী। 
ধর্মীয় উৎসবগুলো এখানকার মুসলমানেরা সাড়ম্বরে উদ্‌যাপন করে।

রাজধানী কাভারত্তি দ্বীপে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী উজরা মসজিদ এখানকার মুসলমানদের প্রধান মিলনায়তন। এই মসজিদকে মহিদ্দেন মসজিদ বা লাক্ষাদ্বীপ মসজিদও বলা হয়। প্রবাল পাথরে ঠাসা বালুময় সৈকতের সারি সারি নারকেলগাছের মাঝে অবস্থিত এই মসজিদ লাক্ষাদ্বীপের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য।

উজরা মসজিদের বর্তমান কাঠামোটি নতুনভাবে নির্মাণ করা হলেও এখানে সতেরো শতকের পুরোনো কাঠামোর একটি ছাদ এবং এর বিভিন্ন নকশা এখনো বহাল রয়েছে। বর্তমান দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি ২০০৫ সালে নির্মিত এবং ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালাম এর উদ্বোধন করেন। মসজিদ থেকে আরব সাগরের স্বচ্ছ নীল ও বিস্তীর্ণ জলরাশি এবং বড় বড় বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচল খুব সুন্দরভাবে দেখা যায়।

ফলে লাক্ষাদ্বীপে আসা পর্যটকেরা মসজিদটি ঘুরে যান।

৫০০ মুসল্লি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই মসজিদের মেঝেতে ইতালীয় মার্বেল পাথর বিছানো হয়েছে। দেয়ালে রয়েছে খোদাই করা কোরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি। মসজিদের শুভ্র দেয়াল ও ঢালু রঙিন ছাদ ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন। এর সামনে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি কয়েকটি কুঁড়েঘর, যা এখানে ধর্মীয় শিক্ষালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মসজিদ প্রাঙ্গণে কয়েকটি প্রাচীন কবরও রয়েছে, যা এসব দ্বীপে আসা আরবের ইসলাম প্রচারক ও সুফি-দরবেশদের সমাধি বলে বিশ্বাস করা হয়।

উজরা মসজিদের স্থাপত্য ইসলামি ধারার স্থাপত্যকৌশলের সঙ্গে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী ধারার মিশেল রয়েছে। ভারতের জাতীয় ফুল পদ্মের একটি মোটিফও মসজিদের সামনে স্থাপন করা হয়েছে, যা এই অঞ্চলের বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।

মসজিদের উঁচু ও সুরম্য মিনারগুলো ইসলামের মহিমা ঘোষণা করে। তিনটি চিত্তাকর্ষক পেঁয়াজ আকৃতির গম্বুজ মসজিদের কাঠামোর ওপরে বসে আছে। মসজিদের খিলানযুক্ত প্রধান গেটের দিকে যাওয়ার পথে একটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারাও রয়েছে। এর আঙিনায় পর্যটকদের বসার এবং ছবি তোলার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। তবে অমুসলিম পর্যটকদের ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য রক্ষায় বিশেষ নির্দেশনা মেনে এখানে প্রবেশ করতে হয়।

মসজিদের নকশায় ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। তুমুল বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহনশীল উপাদানে মসজিদটি তৈরি করা হয়। ভূমিকম্প ও প্রবাল পাথরের বিষয়টিও নকশায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিছুটা তাজমহলের মতো নকশার কারণে একে লাক্ষাদ্বীপের তাজমহলও বলা হয়। সৈকতের বালুকাবেলার উন্মুক্ত পরিবেশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক উজরা মসজিদ লাক্ষাদ্বীপের শান্তিপ্রিয় মানুষের একতা ও সম্প্রীতির প্রতীক।

কোরআনে ইসলাম প্রচারকের অপরিহার্য ৫ গুণ

জানাজা ও কাফনদাফনে অংশ নেওয়ার সওয়াব

হালাল-হারাম নিয়ে সংশয় থাকলে করণীয়

আসরের নামাজ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

কোরআন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক এখনই

মুসলিম ঐতিহ্যে টুপির গুরুত্ব

ব্যবসা-বাণিজ্যে নিষিদ্ধ ৮ কাজ

নামাজে সতর ঢাকা সম্পর্কে সতর্কতা

সীমান্ত পাহারা দেওয়া শ্রেষ্ঠতম ইবাদত

সেকশন